বিশ্ব জুড়ে মৃত্যু মিছিল। করোনা ভাইরাসের আক্রমণে একদিকে যেমন মৃত্যুর শোক তেমনি আগামী দিনের অর্থনৈতিক মহামন্দার কালো ছায়ায় কাঁপতে শুরু করেছে সারা বিশ্ব। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বড় সুনামি বিশ্ব অর্থনীতিতে আর আসেনি। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল(IMF) ইতিমধ্যেই বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ১৯৩০ সালের বিশ্ব অর্থনীতির মহামন্দার সঙ্গে তুলনা করেছে।
কি হয়েছিল ১৯৩০ সালে? সেই সময় অর্থনৈতিক সঙ্কটের ভরকেন্দ্র ছিল আমেরিকা। বন্ধ হয়েছিল একের পর এক ব্যাঙ্ক। ৪০ কোটি ডলার উবে যায় বাজার থেকে। সারা ইউরোপ জুড়ে কোটি কোটি মানুষের চাকরি যায়। কিন্তু এবার ভরকেন্দ্র কোথায়, চীন না আমেরিকা? ভরকেন্দ্র যেই হোক না কেন এই সঙ্কট থেকে পৃথিবীর নিস্তার নেই। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন জানিয়েছে বর্তমানে বিশ্বে প্রতি পাঁচজন শ্রমিকের মধ্যে চারজনের কাজের জায়গা বন্ধ। আর আমাদের দেশের আবস্থা আরও ভয়াবহ। সেন্টার ফর মনিটারিং ইন্ডিয়ান ইকনমি প্রাইভেট লিমিটেড জানিয়েছে,’ভারতে ১৩৭ কোটি মানুষের মধ্যে ১০৩ কোটি মানুষ কর্মক্ষম। সেখানে গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কাজে যুক্ত ছিল মাত্র ৪০.৪ কোটি মানুষ। কিন্তু করোনা আক্রমনের পর দেশ জুড়ে শুরু হয় লকডাউন। এপ্রিল মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যে কাজ যায় ১১.৯ কোটি ভারতবাসীর যার মধ্যে আট কোটি মানুষ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারি।’ তাছাড়া ভারতে ১১ কোটি মানুষ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। পশ্চিমবঙ্গে সেই সংখ্যাটা ১.৩৫ কোটি। তার উপর আছে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, চায়ের দোকান,পানের দোকান, রাস্তার পাশের ফুচকার দোকান, ট্রেন বাসের হকার,ভ্যান,টোটো,অটো চালকের মত মানুষ যারা দিন আনে দিন খায়,তাদের সংখ্যাটা আরও অনেক বেশী। ইতিমধ্যেই অনাহার থাবা বসাতে শুরু করেছে সেই পরিবার গুলোর উপর। ফলে এই মুহূর্তে যে করোনার আক্রমণ থেকে বাঁচবে সে কি আদৌ বাঁচবে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন?