বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বাংলায়। তাই বাংলার চারজনকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার পিছনে কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের অঙ্কই কাজ করছে? মোদীর হিসেব, নিশীথ প্রামাণিকের জন্য পাশে থাকবে কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গের রাজবংশী ভোট। একই যুক্তিতে শান্তনু ঠাকুরের জন্য বিজেপিকে সমর্থন দেবে মতুয়া সমাজ। প্রশ্ন উঠছে, উত্তরবঙ্গের চা বাগান শ্রমিক, কর্মচারীদের কথা মাথায় রেখেই কি আলিপুরদুয়ারের এমপি জন বারলার অন্তর্ভুক্তি হয়েছে মন্ত্রিসভায়?
আগামী লোকসভা নির্বাচনের সমীকরণে নরেন্দ্র মোদীর মাথায় রয়েছে উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলের উন্নয়নের ইস্যু। তাই মোদীর মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা হয়েছে বাঁকুড়ার সংসদ সদস্য সুভাষ সরকারকে।
আগে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় বাংলার সদস্য ছিলেন দু’জন। বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরী। কিন্তু বুধবার তাঁরা দু’জনেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। কোচবিহারের এমপি নিশীথ প্রামাণিককে এবার বিধানসভা নির্বাচনে ওই লোকসভা কেন্দ্রের দিনহাটা বিধানসভা আসন থেকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। অত্যন্ত স্বল্প ব্যবধানে তিনি জয়ী হন। পরে অবশ্য বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন।
কোচবিহার লোকসভার অধীন ছ’টি বিধানসভাতেই এবার জয়ী হয়েছে বিজেপি। ফলে নিশীথ প্রামাণিককে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নিয়ে এসে একদিকে যেমন রাজবংশী ভোটব্যাঙ্ককে নিজের হাতে রেখে দিলেন মোদী তেমনই বিধানসভা ভোটে ভালো ফলের কারণেও তাঁকে পুরস্কৃতও করা হল।
উত্তরবঙ্গের আর এক সাংসদ জন বারলার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির নেপথ্যেও লোকসভা নির্বাচনের অঙ্কই কাজ করছে।
জন বারলা চা বাগান শ্রমিকদের নেতা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে চা বাগানগুলির উন্নতি। বিশেষ করে বন্ধ চা বাগান খোলার দাবিতে বিভিন্ন সময় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলিও। এবার সরাসরি সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন বারলা। ফলে চা বাগানের মানুষের কাছে মন্ত্রীর মাধ্যমে পৌঁছনো তুলনায় অনেক সহজ হবে কেন্দ্রের। তবে সম্প্রতি উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য হিসেবে দাবি করে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছিলেন আলিপুরদুয়ারের ওই এমপি।
সিএএ ইস্যুতে বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে যথেষ্ট ‘বিদ্রোহী’ হয়েছিলেন বনগাঁর সংসদ সদস্য শান্তনু ঠাকুর। এতে করে বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। প্রশ্ন উঠছে, শান্তনুকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য করে নরেন্দ্র মোদি কি আদতে তাঁর ‘বিদ্রোহ’ বন্ধ করে দিলেন? একইসঙ্গে কাছে টেনে নিলেন মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককেও। এবারের বিধানসভা ভোটে জঙ্গলমহলে ভালো ফল করেছে বিজেপি। জঙ্গলমহলের উন্নয়নের রাজনীতিকে মাথায় রেখেই সুভাষবাবুর অন্তর্ভুক্তি হল মন্ত্রিসভায়।
You must be logged in to post a comment.