বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে বাগুইআটির এক বেসরকারি নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক দেবেশ রায়। চিরকালের জন্য চলে গেলেন তিস্তাপারের বৃত্তান্তের সৃষ্টিকর্তা। তাঁর অসংখ্য কালজয়ী উপন্যাস, ছোট গল্প এবং প্রবন্ধ পিছনে ফেলে চলে গেলেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। মঙ্গলবার রাতে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল সোডিয়াম–পটাসিয়ামের সমস্যার জন্য। সেদিনই ভেন্টিলেশনে চলে যান বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক। রাত ১০টা ৫০ প্রয়াত হলেন তিনি, ৮৪ বছর বয়সে। লকডাউনের মাঝে তাঁর অসংখ্য অনুরাগীদের শোকস্তব্ধ করে।
সূত্রের খবর, যেহেতু প্রবীণ সাহিত্যিকের শ্বাসকষ্ট ছিল তাই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছিল কি না জানার জন্য। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন এই অশীতিপর সাহিত্যিক। তাঁর ছেলে দেবর্ষি থাকেন আমেদাবাদে। মাস দুয়েক আগে অসুস্থ সাহিত্যিক শঙ্খ ঘোষকে দেখতে যান। দু’তিন দিন হল অসুস্থ হয়েছিল। শুক্রবার সকাল সওয়া আটটায় দেবেশ রায়ের দেহ আনা হবে বাগুইআটির বাল্মীকি আবাসনে, যেখানে তিনি থাকতেন। সেখান থেকেই সরাসরি নিয়ে যাওয়া হবে রতনবাবুর ঘাটে।
উল্লেখ্য, তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘যযাতি’। তাঁর সাহিত্যসৃষ্টির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘উদ্বাস্তু’, ‘নিরস্ত্রীকরণ কেন’, ‘কলকাতা ও গোপাল’, ‘সময় অসময়ের বৃত্তান্ত’, ‘শরীরে সর্বস্বতা’, ‘বরিশালের যোগেন মণ্ডল’, ‘তিস্তাপুরাণ’ এবং ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’। সাহিত্যিক মহলে ‘লেখকদের লেখক’ বলা হতো দেবেশবাবুকে। তাঁর নিজস্ব লেখার স্টাইল এক অন্য ঘরানা তৈরি করে বাংলা সাহিত্যে। ১৯৯০ সালে তিস্তাপারের বৃত্তান্তের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান তিনি। ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, গল্পকারের পাশাপাশি তাঁর আরও একটি পরিচয় মনে রাখবে বাঙালি। ১৯৭৯ সাল থেকে এক দশক তিনি সম্পাদনা করেছেন ‘পরিচয়’ পত্রিকা।
তাঁর জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের পাবনা জেলার বাগমারা গ্রামে। কিন্তু বেড়ে ওঠার সূত্রে উত্তরবঙ্গ ছিল তাঁর অন্যতম প্রেম। লেখার পাশাপাশি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে একটা সময় ট্রেড ইউনিয়ন করেছেন চুটিয়ে। বর্ষীয়ান সাহিত্যিকের প্রয়াণে শোকের ছায়া লেখক ও পাঠকমহলে।