রাজ্য

দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা কোথায় বেশি?

শহর কলকাতায় করোনাভাইরাস এখন অনেকটাই কমেছে। কিন্তু কোন কোন এলাকায় দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা ছিল সবচেয়ে বেশি, তা নিয়ে নানা জল্পনা রয়েছে। কেউ বলেন দক্ষিণ কলকাতায়, কারও মতে উত্তর বা মধ্য কলকাতা। খিদিরপুর–মেটিয়াবুরুজ–গার্ডেনরিচ এলাকায় দূরত্ববিধি মানা বা মাস্ক পরার প্রবণতা অত্যন্ত কম থাকায় তা নিয়ে তির্যক মন্তব্য করতে ছাড়েননি অনেকে।

কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, দ্বিতীয় ঢেউয়ের চূড়ান্ত দাপাদাপির সময় ঠিক কোন কোন এলাকায় করোনা বেশি হয়েছে। কোথায়ই বা কোভিডের উৎপাত ছিল কম। ২১ এপ্রিল থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত পুরসভার পরিসংখ্যানে (প্রতি ১৪ দিন অন্তর হিসেব) দেখা গিয়েছে, এই পর্বে মহানগরে সবচেয়ে বেশি কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে মূলত চারটি বরো এলাকায়। সেগুলি হল— ১০, ১১, ১২ এবং ১৪ নম্বর। আর সবচেয়ে কম কোভিড সংক্রমণ হয়েছে মূলত তিনটি বরোয়। ৪, ৫ এবং ১৫ নম্বরে। ওয়ার্ডের বিচারে কোভিড অনেক বেশি হয়েছে ৬৭, ৯৩, ৯৭, ১০৬, ১০৭, ১০৯নং ওয়ার্ডে। তুলনায় সংক্রমিতের সংখ্যা অনেক কম ১৩৬, ১৩৭, ১৩৮, ১৩৯, ১৪০ নম্বর ওয়ার্ডে।

মুকুন্দপুর, কসবা, যোধপুর পার্ক, অজয়নগর, রাজডাঙা, টালিগঞ্জ, বেহালা, জোকা প্রভৃতি জায়গায় কোভিড রক্তচক্ষু দেখিয়েছে। উত্তর ও মধ্য কলকাতার বিবেকানন্দ রোড, গিরিশ পার্ক এলাকা, বিধান সরণি, সূর্য সেন স্ট্রিট, কলেজ স্কোয়ার, শিয়ালদহ, বউবাজার প্রভৃতি এলাকায় করোনার দাপট ছিল তুলনায় অনেক কম। অনেককে অবাক করে সর্বনিম্ন সংক্রমণ ঘটেছে খিদিরপুর, মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচে।

এই সংক্রমণের তারতম্য কেন? ১০ নম্বর বরোর কো–অর্ডিনেটর তপন দাশগুপ্তের কথায়, ‘‌আমার এলাকায় ১২টি ওয়ার্ড আছে। অন্যান্য বরোতে রয়েছে ৭-৮টি ওয়ার্ড। এখানে তা প্রায় দ্বিগুণ। স্বাভাবিক কারণেই এই বরো এলাকায় সংক্রামিতের সংখ্যা বেশি। ১২ মে যেখানে ৬৯৪ জন আক্রান্ত ছিলেন, সেখানে বর্তমানে মাত্র তিনজন আক্রান্ত। পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’‌ ১২ নম্বর বরোর কো–অর্ডিনেটর সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‌আমার এলাকায় বড় বড় বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম রয়েছে। বড় বড় হাউসিং কমপ্লেক্সও আমার এলাকাতেই রয়েছে। সেখানে সংক্রমণের হার বেশি ছিল। বর্তমানে অনেকটাই কম।’‌

কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের উপদেষ্টা ডাঃ তপনকুমার মুখোপাধ্যায় জানান, জনবহুল ও ঘিঞ্জি এলাকায় থাকতে যাঁরা অভ্যস্ত, তাঁদের মধ্যে কোনও না কোনওভাবে ইমিউনিটি পাওয়ার বেশি বলেই হয়তো সেখানে সংক্রামিতের সংখ্যা কম। হয়তো তাঁদের সাব–ক্লিনিক্যাল সংক্রমণ হয়েছে। আরটিপিসিআর-এ ধরা পড়েনি। তার মানে আবার কেউ যেন এমন মনে না করেন, ভিড় করব, বিধি মানব না।