খেলাধুলা জেলা

প্যারা ন্যাশনালে সোনা জয় বসিরহাটের সাকিনার

মাত্র দেড় বছর বয়সে তিনদিন জ্বরে ভোগান্তির পর পোলিও রোগে আক্রান্ত হয় মেয়েটা। কোমর থেকে পা পর্যন্ত বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে। ১ ভাই ও  ৩ বোনের সংসারে পরিবারের সেজো মেয়ে সাকিনা। বাবা সিরাজুল গাজী মা নুরজাহান বিবি পরের জমিতে চাষের কাজ করে দিনমজুর খেটে মেয়েকে সুস্থ করার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেননি। কিন্তু থেমে যাইনি বাবা-মা’র স্বপ্ন। তাদের স্বপ্ন  ছিল, সাকিনা বাংলা তথা দেশের নাম উজ্জ্বল করুক। সাকিনাও সেদিন শপথ নেয় কিছু করে দেখাবার। এরপর সাকিনার হার না মানা মানসিকতা। কঠিন অনুশীলন। আর রেকর্ডের পর রেকর্ড।

সাকিনা খাতুন। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার বসিরহাট – ২ ব্লকের কোড়াপাড়া গ্রামের কৃষক পরিবারের মেয়ে। এবার প্যারা ন্যাশনালে সোনা জয় করে চমকে দিয়েছে সকলকে। এত্রফলে নয়া পালক উঠল সাকিনার মুকুটে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে কমনওয়েলথ গেমসের ইতিহাসে প্রথম মেয়ে হিসেবে ব্রোঞ্জ জয় করেদেশের নাম উজ্জ্বল করে সাকিনা। তারপর ২০১৮ সালে এশিয়াডেও গেমস ব্রোঞ্জ পায় সে। ২০২১ সালে করোনা মহামারীর মধ্যেও লড়াইতে নেমেছিল সাকিনা। জাপানের টোকিওতে প্যারা অলিম্পিকে পঞ্চম স্থান দখল করে। ২০২২ সালে চলতি মাসে ১৯ শে মার্চ জাতীয় প্যারা অনুষ্ঠিত হয় সল্টলেকের সাইতে। সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে জাতীয় স্তরে গোল্ড মেডেল পায় হতদরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্ধী মেয়ে সাকিনা।

চলতি বছর জুন মাসে কোরিয়াতে লড়াইতে নামবে সাকিনা। তার মূল লক্ষ্য, ২০২৪ সালের ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত প্যারিসে প্যারা অলিম্পিক অংশগ্রহণ করা। সেই লড়াইয়ের জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সাকিনা। গত দু’বছর করোণা মহামারীর জন্য ঠিকমতো প্র্যাকটিস করতে পারিনি সে। তাই এবার নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে তৈরি হচ্নিছে সাকিনা।

ইতিমধ্যেই সাকিনাকে স্বীকৃতি স্বরুপ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে  একটি সরকারি ঘর ও কোড়াপাড়া গ্রামে তার নামাঙ্কিত একটি পিচের রাস্তা তৈরী করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। সাকিনার  কথায়, “আমার অদম্য ইচ্ছা শক্তির নিয়ে এগিয়ে আমি সফল হয়েছি। আমার মতন যারা ভয় পেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন, তারা আমার পথ অনুসরণ করে এগিয়ে চলুক। একদিন তারাও সফল হবে শুধু দরকার নিজের ইচ্ছা আর মনের সাহস।”