লাদাখ, উত্তরাখণ্ড, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ। লাদাখের সীমান্ত সঙ্কট নিয়ে দফায় দফায় শান্তি বৈঠক চলাকালীনই ভারতের এই চার সীমান্তে বিপুল সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে ফের অশান্তি তৈরির চেষ্টা শুরু করেছে চীন। পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের আগ্রাসী হয়ে উঠেছে পাকিস্তানও। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শান্তি বজায় থাকলেও, সম্প্রতি বেশ কয়েকবার সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গুলি, মর্টার ছুড়েছে তারা।
গোটা বিষয়টিকে চীন-পাকিস্তান অক্ষের পরিকল্পনা হিসেবেই বিবেচনা করছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। আফগানিস্তানে তালিবানের উত্থান ও ক্ষমতা দখলের সঙ্গে এই ঘটনা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে বলেই অনুমান নয়াদিল্লির। কারণ, প্রথম থেকেই তালিবানের সমর্থক এবং মন্ত্রণাদাতা চীন ও পাকিস্তান। সেনাপ্রধান নিজেই বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে পরবর্তী রাউন্ডের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়ায় সবরকমভাবে অংশ নিতে প্রস্তুত আমরা। কিন্তু চীন উত্তর থেকে পূর্ব, প্রতিটি প্রান্তে বিপুল সেনা মোতায়েন করে চলেছে।
পূর্ব লাদাখের উল্টোদিকে অন্তত শতাধিক নতুন সেনা শিবির খুলেছে। গত মার্চ মাস থেকে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত একমাসে তা বৃদ্ধি পেয়েছে উদ্বেগজনকভাবে।’ একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘আফগানিস্তানে পালাবদলের পর সতর্কতা বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু ঠিক এই সময়েই চীন ও পাকিস্তানের সীমান্ত সক্রিয়তা কেন বেড়ে যাচ্ছে?’
তবে চীনকে পাল্টা দিতে প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখছে চাইছে না ভারত। শনিবারই লাদাখে মোতায়েন করা হয়েছে সেল্ফ প্রপেলড হাউইৎজার রেজিমেন্ট কে নাইন বজ্র। পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এই হাউইৎজার বসানো হয়েছে। এই অত্যাধুনিক হাউইৎজার ৫০ কিলোমিটার রেঞ্জে প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালাতে সক্ষম। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরাসরি চীনকেই কড়া বার্তা দিয়েছে ভারত।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারংবার উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত বলেছে, পালাবদলের পর সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠতে পারে আফগানভূমি। আন্তর্জাতিক মহলও প্রায় সম্মিলিতভাবে এই আশঙ্কার সপক্ষে সুর মিলিয়েছে। এইরকম পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসের আশঙ্কাকে জিইয়ে রেখে, পাকিস্তান এবং চীন ভারতকে সামরিকভাবে কোণঠাসা করার ষড়যন্ত্র করছে বলে অনুমান ওয়াকিবহাল মহলের। সেই কারণে, আলোচনা চলার মধ্যেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সেনা সমাবেশ ও যুদ্ধ সরঞ্জাম মজুত করছে চীন। ঠিক শীতকালের আগে এই সক্রিয়তা বিশেষ অর্থবহ। তাই কড়া বার্তা দিতে লাদাখে চীন সীমান্তে সরাসরি হাউইৎজারই মোতায়েন করে দিল সেনা।