রাজ্য

একসপ্তাহে ধসে পড়ল ১১টি বিপজ্জনক বাড়ি

শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজারো বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের মূল সুর এটাই। কোথাও টাকার অভাব, কোথাও মালিক–ভাড়াটিয়া বিবাদ, কোথাও আবার শরিকি ঝামেলা লেগেই রয়েছে। সেই জল আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। যুগ যুগ ধরে এই সব সমস্যার রফাসূত্র বের হয়নি।

ঘটনা ১: ২৫ জুলাই, রবিবার। হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ভবানীপুরের রামরিক হাসপাতাল সংলগ্ন একটি বিপজ্জনক বাড়ির তিনতলার বারান্দার একটি অংশ। যদিও ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
ঘটনা ২: ১ জুলাই। আবারও এক রবিবারের দুপুর। ভেঙে পড়ে একতলা বাড়ির ছাদের একাংশ। কলকাতা পুরসভার ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের বন্ডেল রোড এলাকা। মৃত এক বাসিন্দা।

ঘটনা ৩: কলকাতার ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার ফের বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। শিয়ালদহের মণীন্দ্র মিত্র রোডে একটি দোতলা বাড়ির একদিকের দেওয়াল আচমকা ভেঙে পড়ে। তবে কেউ আহত হয়নি।
এই তিনটি ঘটনা উদাহরণ মাত্র। কলকাতার বুকে এমনই ১১টি পুরনো বাড়ি গত ১২ দিনে ভেঙে পড়েছে। একদিকে জীর্ণ ইমারত, অন্যদিকে নাগাড়ে বৃষ্টি— দুইয়ে মিলিয়ে আলগা হয়েছে বাড়ির দেওয়াল। ধসে পড়েছে একাংশ। তবে তার মধ্যেই চলছে বসবাস।

কখনও বাসিন্দাদের ঘরে থেকে উদ্ধার করেছেন দমকল কর্মীরা। কখনও আবার মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছে আহতদের। কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত এটাই চলতি বছরের রেকর্ড। আগে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে শহরে ভেঙে পড়েছিল ১৫টি জীর্ণ বাড়ি। সেবার তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। যার মধ্যে ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটেই একটি পুরনো বাড়ি ভেঙে দু’জন মারা গিয়েছিলেন।

পর পর কেন ঘটছে এমন ঘটনা? দেখা গিয়েছে, টানা বৃষ্টিতে বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা খুব একটা শোনা যায় না। তবে ভারী বৃষ্টির পর রোদ উঠলেই চিন্তা বাড়ে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের কর্তাদের। কারণ সেই সময়ই বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটে। পুর ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাখ্যা, এগুলি প্রায় ১০০-১৫০ বছরের পুরনো। চুন ও সুরকি দিয়ে তৈরি। রোদে ওই চুন-সুরকির দেওয়ালের ফাটলে টান পড়লেই তা ছেড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়ে ওই অংশ। আসলে বছরের পর বছর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই ভেঙে পড়ছে জীর্ণ বাড়িগুলি।

 

সিমেন্টের গাঁথনি হলে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা কম।
পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ভিটেমাটি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা, নানা আইনি জটিলতায় এই সমস্যা রয়ে গিয়েছে। এই ধরনের বাড়িতে আধিকারিকদের পাঠানো হচ্ছে। ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটরদের সঙ্গে নিয়ে বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের বোঝানো হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে নোটিস। কিন্তু কে কার কথা শোনে!