বিনোদন

থ্রিলার-রোমান্টিক গল্প নিয়ে আসছে ‘রাজনন্দিনী’

‘কেউ কথা রাখেনি’— সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই বহুল জনপ্রিয় কবিতার পঙ্ক্তিটি বোধ হয় সর্বাংশে সত্য নয়। কেউ কেউ কথা রাখে। যেমন রেখেছেন, পরিচালক তন্ময় রায় ও প্রযোজক সুধীর দত্ত জুটি। বলেছিলেন, ভালো ছবি উপহার দেবেন। কথা রাখছেন তাঁরা। তাঁদের প্রথম ছবি ছিল ‘শেষ চিঠি’ । ছবিটি নমিনেশন পেয়েছিল টরেন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। সেই ছবি কুড়িয়েছে দেশে-বিদেশে ১৭টি পুরস্কার। সেই জুটিরই দ্বিতীয় ছবি ‘রাজনন্দিনী’। ছবিটি প্যারানরমাল সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। কিন্তু শেষপর্যন্ত এটি রোমান্টিক গল্পই শোনাবে দর্শক-শ্রোতাদের।

লোকমুখে নানা অলৌকিক ঘটনা শোনা যায় কিষানগঞ্জের নীল হাভেলি সম্পর্কে। সেই ঐতিহাসিক রাজবাড়িটি একশো বছরেরও পুরোনো। ওই বাড়িতে নাকি আজও প্রেতাত্মা বাস করে। কথিত আছে, যারা সেই হাভেলিতে যায়, তারা কেউ জীবিত ফিরে আসে না। সেই ভুতুড়ে বাড়িতেই কলেজ এক্সকারশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় একদল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিষেধ সত্ত্বেও প্রত্নতত্ত্বের প্রাক্তন অধ্যাপক ফার্নান্ডেজ দু’দল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে সেখানে যায়। অধ্যাপকের মূল লক্ষ্য রাজবাড়িতে লুকানো রত্নখচিত রাধামাধবের মূর্তি হস্তগত করা। সেখানে গিয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় সবাই। ঐতিহাসিক রহস্য ও অতিভৌতিক দাঁতগুলো বিকশিত হাভেলির দেওয়ালগুলো ফিসফিসিয়ে রোমাঞ্চ-রহস্যে ভরা রাজবাড়ির অতীত কাহিনি বলতে থাকে। ছাত্রদের প্রধান রাহুল গতজন্মের প্রেমিকা রাজকন্যা ‘রাজনন্দিনী’ আত্মার সাথে বিলীন হয়ে যায়। ভাগ্যক্রমে জীবিত ফিরে আসে একমাত্র রাজ ও পায়েল।

ছবির প্রযোজক জনপ্রিয় সুরকার, গীতিকার, গল্পকার এবং পরিচালক সুধীর দত্ত বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে নানা সামাজিক বার্তা দেওয়ার জন্যই ছবি তৈরি করি। আমার প্রথম ছবি ‘শেষ চিঠি’তে সামাজিক বার্তা ছিল। দ্বিতীয় ছবি ‘রাজনন্দিনী’ও সেই বার্তা দেবে।’

বার্তাটি কেমন? সে প্রসঙ্গে তিনি জানান, এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেক সময়ই অভিভাবকদের কথা অমান্য করে হঠকারি সিদ্ধান্ত নেয়। যার ফলাফল কতটা ভয়ানক হতে পারে, সেটিই বলার চেষ্টা করা হয়েছে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘ছবিটি হরর ঘরানার হলেও এখানে পুনর্জন্মের একটা বিষয় রয়েছে। চমকটা সেখানেই।’

ছবির মুখ্য চরিত্র রাজনন্দিনী। এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেবলীনা দত্ত। নিজের অভিনীত চরিত্র সম্পর্কে দেবলীনা বললেন, ‘ছবিতে আমার নাম নন্দিনী। ছবিটি পুনর্জন্মের ওপর। নায়কের পুনর্জন্ম হয়। তবে নায়িকার অবশ্য এরকম গল্প নেই। ছবিতে অতীত আর বর্তমানের দুটো জীবন দেখানো হয়েছে। ছবিটিকে অনেকে হরর মুভি ভাবতে পারে। তবে এটি একেবারেই ভয়ের ছবি নয়। আপাদমস্তক একটি প্রেমের গল্প।’

দুটি ভাষায় ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলার পাশাপাশি ডাবিং করা হয়েছে হিন্দিতেও। দ্বিভাষিকতার কারণেই কলকাতার সঙ্গে মুম্বাইয়ের সুদেশ বেরী, অমিতা নাঙ্গিয়া, নাফে খান, আদেশকুমারসহ একাধিক শিল্পী অভিনয় করেছেন। দেবলীনা ছাড়াও কলকাতা থেকে অভিনয় করেছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, সান্ত্বনা বসু, সত্যজিৎ চক্রবর্তী, বীরেশ্বর, পূজা গঙ্গোপাধ্যায় এবং সুধীর দত্ত নিজে।
ছবির সংগীতায়োজন প্রসঙ্গে সুধীর জানান, ছবিতে মোট পাঁচটি গান রয়েছে। গানগুলো গেয়েছেন রথিজিৎ ভট্টাচার্য, শোভন গঙ্গোপাধ্যায়, ঋক বসু, রূপসা দত্ত, রাখী দত্ত প্রমুখ। এতে সুধীর ছাড়াও গান লিখেছেন রাজীব দত্ত, অরুণাশিস রায়।
দত্তপুকুর সংলগ্ন এক বাগানবাড়িতে ছবির বেশিরভাগ কাজ হলেও কিছুটা হয়েছে কানাডায়। খুব শীঘ্রই মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। এবার দর্শকদের অপেক্ষার কাউন্ট-ডাউন শুরু।