বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকায় অনেক মণ্ডপেই দুর্গাপুজো হয়। কিন্তু কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হয় একমাত্র রামকৃষ্ণ মিশন মঠের মন্দিরে। মহাঅষ্টমীর দিনেই এখানে জাকজমকভাবে কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়। রামকৃষ্ণ মিশনের ঢাকার বাইরেও নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল ও যশোর শাখায় কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। স্বামী বিবেকানন্দ মাতৃজাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ১৯০১ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদাদেবীর অনুমতিক্রমে কুমারী পুজোর প্রচলন করেন।
কুমারী পুজো এক বিশেষ ধরণের পুজো, যে পুজোয় এক কুমারীকে দেবীর আসনে বসিয়ে মাতৃরূপে পুজো-অর্চনা করা হয়। শঙ্খের ধ্বনি, কাঁসর ঘন্টা, ঢাকের বাদ্য ও উলুধ্বনি দিয়ে কুমারী মাকে পুষ্পমাল্য পরিয়ে দেওয়া হয়। কুমারী দেবী ভগবতীর অতি সাত্বিক রূপ। কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। দেবী দুর্গার আরেক নাম কুমারী। মূলত নারীকে যথাযত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতেই কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়। মাটির প্রতিমায় যে দেবীর পুজো করা হয়, তারই বাস্তবরূপ কুমারী পুজো।
ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান মহারাজ কুমারী পুজো নিয়ে বলেন, পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী দেবতাদের স্তবে প্রসন্ন হয়ে দেবী চন্ডিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে দেখা দিয়েছিলেন। দেবীপুরাণে এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ আছে। তবে অনেকে মনে করেন যে, দুর্গাপুজোয় কুমারী পুজো সংযুক্ত হয়েছে তান্ত্রিক সাধনামতে। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদেও কুমারীর কথা উল্লেখ আছে। আর এ থেকে অনুমান করা যায় যে দেবীর কুমারী নাম অনেক পুরনো। দেবীর কুমারী নাম যেমন পুরনো, তার আরাধনা ও পুজোর রীতিনীতিও তেমনি প্রাচীন ও ব্যাপক।
দেবীজ্ঞানে যে কোনো কুমারীই পূজনীয় তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পুজোই সর্বত্র প্রচলিত। ব্রাহ্মণ ছাড়াও অন্য জাতির কন্যাকেও কুমারীরূপে পুজো করতে বাধা নেই। কিন্তু অবশ্যই কুমারীকে ঋতুমতী হওয়া চলবে না। তন্ত্রঅনুসারে এক থেকে ষোল বছর পর্যন্ত ব্রাহ্মণ বালিকাদের কুমারী পুজোর জন্য নির্বাচিত করা হয়ে থাকে।
প্রতি বছরের মতো এবারও রামকৃষ্ণ মিশনে মহাষ্টমীর দিন সকালে কুমারী পুজোয় বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকবে। প্রথা ও নিরাপত্তার কারণে কুমারী মেয়েটির নাম ও পরিচয় পুজোর আগে প্রকাশ করা হয় না। সকালে নির্দিষ্ট কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হবে। ফুলের মালা, চন্দন, নানা অলংকার, প্রসাধন ও উপাচারে নিপুন সাজে সাজানো হবে কুমারীকে। এরপর তাকে নিয়ে আসা হবে পুজো মণ্ডপের নির্দিষ্ট আসনে। চলবে পুজোর যথাবিহিত আয়োজন। ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের এ পুজো খুবই আকর্ষণীয়। কুমারী পুজো দেখতে প্রতি বছর মহাষ্টমীর দিন সেখানে প্রচুর ভক্ত ও সাধারণ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।