কাজের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে তরুণী ফুঁসলিয়ে আনা। তারপর অন্যত্র পাচার। এটাই তার প্রধান কাজ। নারী পাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল গভীর। নারীপাচারকে পেশা করে রোজগার করেছে কয়েক কোটি টাকা। বাড়ি, গাড়ি, জমি, বাংলো—বিপুল বৈভবের অধিকারী। শেষ পর্যন্ত সিআইডির হাতে ধরা পড়ে গেল আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের কিংপিন নবদ্বীপের বাসিন্দা দীপু মণ্ডল। দুই বাংলাদেশি তরুণীকে বেঙ্গালুরুতে পাচারের সময় কলকাতা বিমানবন্দরে ধরে পড়ে যায় দীপু। কানাডা এবং দুবাইতেও নারী পাচার করেছে সে। এই চক্রে বিদেশের কারা কারা যুক্ত তাকে জেরা করে জানার চেষ্টা হচ্ছে।
কীভাবে তার সম্পর্কে তথ্য মিলল? সিআইডি সূত্রের খবর, নদীয়ার সীমান্ত লাগায়ো এলাকা থেকে এক বাংলাদেশি তরুণীকে উদ্ধার করে বিএসএফ। তাকে জেরা করে জানা যায়, কানাডাতে কাজ পাইয়ে দেবে বলে তাকে এই রাজ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। সে জানায়, দীপু নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে কাজ পাওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশের দুই নারী পাচারকারী তাঁকে সীমান্তের দালালের কাছে পোঁছে দেয়। দালালরাই তাকে সীমান্ত পার করায়। তখনই উদ্ধার হয় ওই তরুণী। উঠে আসে কিংপিন দীপুর নাম।
নারীপাচারে বাংলাদেশের নাম আসায় সিআইডিকে বিষয়টি জানানো হয়। তারা খোঁজখবর করতে গিয়ে জানতে পারেন কর্পোরেট ধাঁচে এই অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছে দীপু। পাচারের সময় ভিকটিমদের বিমানে যাতায়াত এবং ভালো হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করত সে। ঘনঘন বাংলাদেশে ফোন করত দীপু। সীমান্তের ওপার থেকেও তার কাছে নিয়মিত ফোন আসে।
আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে দুই তরুণী দীপুর কাছে আসবে। তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত প্রমাণপত্র তৈরি করে পাঠানো হবে বেঙ্গালুরুতে। দীপুর বিমানের টিকিট নম্বর জোগাড় করা হয়। জানা যায়, দুই মহিলা তার সঙ্গে বেঙ্গালুরু যাবে। নির্দিষ্ট দিনে সিআইডি টিম পৌঁছে যায় বিমানবন্দর চত্বরে। বিমানবন্দরে ঢোকা মাত্রই দীপুকে পাকড়াও করা হয়। উদ্ধার হয় দুই তরুণীও।
জেরা উঠে আসে, গরীব বা বিবাহবিচ্ছিন্ন সুন্দরী মহিলারা মূলত টার্গেট। কানাডা ও দুবাইতে কাজের লোভ দেখিয়ে তাদের নিয়ে আসা হচ্ছে বাংলাদেশ লাগোয়া নদীয়া ও উত্তর ২৪ পরগনায়। সেখানে তাদের ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজ করিয়ে দেয় দীপুর গ্যাংয়ের লোকজন। ভারতীয় নথি তৈরি করার পর দক্ষিণ ও উত্তর ভারতে পাচার করে দিত দীপু। এমনকী কানাডা ও দুবাইতেও পাচার চলত। তরুণী পিছু ১৫-২০ লাখ টাকা পেত দীপু। মাত্র কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছে দীপু। নদীয়ার একাধিক জায়গায় তার বিলাসবহুল বাড়ি, বাংলো ও জমি রয়েছে। বাড়ি ও ফ্ল্যাটের সংখ্যা ছয়। রয়েছে দামী গাড়ি।