বাংলাদেশ

নারীপাচার চক্রের কিংপিন ‘‌নদী’‌

দুধে–আলতা গায়ের রং। স্ট্রেট করা লম্বা চুল। কাজল দিয়ে টানা চোখ। প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই নাম—‘নদী’। পুরো নাম, নদী আখতার। তবে তার ১০টি ছদ্মনামও রয়েছে। বাড়ি বাংলাদেশে। আর ২৮ বছর বয়সের এই যুবতী ভারত, মালয়েশিয়া এবং দুবাই পর্যন্ত আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের ‘কিংপিন’। বাংলাদেশে ছয় সঙ্গী–সহ সে ধরা পড়েছে। আর এখন তার দেশ–বিদেশের নেটওয়ার্কের খোঁজ চালাচ্ছেন দুই দেশের গোয়েন্দারা।

বাংলাদেশ পুলিশ সূত্রে খবর, বাংলাদেশের ‘জঙ্গি’ রাজীব হোসেনের সঙ্গে নদীর বিয়ে হয়েছিল। ২০১৫ সালে রাজীব মারা যায়। তারপর থেকেই আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রে সক্রিয় হয় ওঠে নদী। তারপর বাংলাদেশ থেকে ভারত, মালয়েশিয়া, এমনকী দুবাইতেও নারীপাচার চক্রের জাল বিস্তার করে লাস্যময়ী। অন্ধকার দুনিয়ায় নিজের রূপ দিয়েই হিল্লোল তোলে। বাংলাদেশ–ভারতে তার প্রচুর লিঙ্কম্যান রয়েছে। তারাই পাচার হওয়া মেয়েদের থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থা করত। জোগাড় করে দিত ভারতীয় পরিচয়পত্রও।

রেড কার্পেট থেকে নষ্ট রাতের দুনিয়ায় এক একটি জায়গায় নদী এক একটি নাম ব্যবহার করত। ভারতে সে ‘ইতি’। আবার সেই ‘জয়া আখতার জান্নাত’ নামে ভারতীয় আধার কার্ড বানিয়েছিল। বাংলাদেশি পাসপোর্টে পরিচয় ‘নুর জাহান’। সাতক্ষীরা সীমান্তে তার নাম ‘জলি’, যশোর সীমান্তে ‘প্রীতি’।

গত ২১ জুন নড়াইল ও যশোর সীমান্তে অভিযান চালিয়ে নদী–সহ নারী পাচার চক্রের সাতজনকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের হাতিরঝিল থানার পুলিশ। তারপর নদীর কর্মকাণ্ড আরও বিস্তারিত সামনে আসে। নদীর সঙ্গে যে ছয়জন সঙ্গী গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হল আল আমিন হোসেন ও পলক মণ্ডল। আল আমিন এক বছর আগে সীমান্তে নারীপাচার করতে গিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। যশোরের শার্শা থানাতেও আল আমিনের বিরুদ্ধে দু’টি মাদক মামলা রয়েছে। বাংলাদেশি তরুণীদের প্রথমে আল আমিনের বাড়িতে লুকিয়ে রাখত নদী। তারপর পাঠানো হত ভারতে। পলক মণ্ডল পাচার হওয়ায় বাংলাদেশি মেয়েদের নামে ভারতীয় আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড তৈরির দায়িত্বে ছিল। ভারতীয় সিম কার্ডও সে জোগাড় করত। অন্ধকার জগতের ‘কারবার’ তদারকি করতে নদী পাড়ি দিত মালয়েশিয়ায়।