বাংলাদেশ

বিয়ের ফাঁদে বাংলাদেশি মেয়েদের পাচার

ওপার বাংলায় গরিব পরিবারের মেয়েদেরই টোপ দেওয়া হয়। বিয়ের টোপ। অষ্টাদশীদের দিকে। দেখানো হয় কলকাতা বা দিল্লির ফ্ল্যাটে সাজানো সংসারের স্বপ্ন। বিশ্বাস অর্জন করতে সাজানো বাবা, মা, বোনের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দেওয়া হয় ফোনে। এদেশে আসার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় বেশি টাকাও পাঠায় পাচারকারীরা। এই টোপে পা দিলেই পাচার অনিবার্য।

এদেশে আসার পর পাতা হয় লোক দেখানো সংসার। মোটা টাকায় বিক্রি হয়ে যায় ওই বাংলাদেশি যুবতীরা। নারী পাচারের এই নয়া ছকে উদ্বিগ্ন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি, বাংলাদেশ সীমান্তে এক বাংলাদেশি যুবতীকে আটক করে নারী পাচারের এই নতুন কৌশলের কথা জানতে পেরেছে বিএসএফ। বাংলাদেশ থেকে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচারের ইতিহাস নতুন নয়। আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মহিলাদের মোটা মাইনের কাজের আশ্বাস দিয়ে দালালরা মূলত ভারত ও মালয়েশিয়ায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের নানা দেশে পাচার করা হয় যুবতীদের।

নারী পাচার চক্রের পাণ্ডারা কাঁটাতারের দু’দিকেই রয়েছে। সম্প্রতি, নারী পাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। নারী পাচারকারীদের কিংপিন ‘নদী’কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাচারকারীরা নতুন কৌশলে নারী পাচার করতে চাইছে। বাগদা সীমান্তে কুড়ি ও বাইশ বছরের দুই বাংলাদেশি যুবতীকে পাকড়াও করেন জওয়ানরা। তাঁদের জেরা করে জানা যায়, ওই দু’জনের বাড়ি বাংলাদেশের নরসিংহডি ও কিশোরগঞ্জ এলাকায়। তাঁদের সঙ্গে হৃদয় ও আবির নামের দুই ভারতীয় যুবকের বন্ধুত্ব হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।

এরপর তারা একই কায়দায় ওই দুই যুবতীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের এদেশে ডেকে পাঠায়। এমনকী হৃদয় তার ‘বাড়ি’র সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলায় তরুণীর। এদেশে আসার জন্য সে-ই টাকা পাঠিয়েছিল তাঁকে। প্রেমের টানেই ওই দুই যুবতী কাঁটাতার পেরিয়ে চলে এসেছিল এদেশে। এরপর ওই দুই যুবক তাঁদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে জোর করে একাধিক লোকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করে। বিক্রির জন্য কথাবার্তা চলাকালীন তাঁরা কোনওমতে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, নারী পাচারকারীরা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে বাংলাদেশি যুবতীদের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্পর্ক তৈরি করে। আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা অল্প শিক্ষিত যুবতীদের তারা বিভিন্নভাবে বিয়ের টোপ দেয়। কোনও যুবতী যদি সেই ফাঁদে পা দেন, তখন তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। আবার কেউ কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইলে তাঁদের চাকরির প্রলোভন দেওয়া হয়। পাচারকারীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের বিভিন্ন সরকারি অফিসে কর্মরত বলে পরিচয় দেয়। বিদেশ ভ্রমণ ও সরকারি অফিসে কাজের নানা ভুয়ো ছবি পোস্ট করে তারা কমবয়সি যুবতীদের আস্থা অর্জন করে।

 

ভরসা তৈরি হলেই সরাসরি দেওয়া হয় বিয়ের প্রস্তাব। বিশ্বাস বাড়াতে কাউকে বাবা, কাউকে মা, কাউকে আবার বোন সাজিয়ে ফোনে কথাও বলিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘পাত্রী’র সঙ্গে। এরপর দালালদের মাধ্যমে তাঁদের এদেশে এনে কিছুদিনের জন্য সংসার পাতে তারা। স্বমূর্তি ধারণ করে স্বামীবেশী যুবক। এরপর যুবতীদের বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকায়।