ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বোতলবন্দি পানীয় জল তৈরির ইউনিট। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা তো দূরঅস্ত, পরিস্রুত (পিউরিফিকেশন) না করেই এই জলকে বোতলবন্দি করে বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে তারা। এমনকী, এই সব ইউনিটের অনেকগুলিরই লাইসেন্স নেই। স্বভাবতই উদ্বিগ্ন কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের (ইবি) আধিকারিকরা। আবার বাজারে এমন অনেক মেশিন বিক্রি হচ্ছে, যার অধিকাংশই কাজের না। তাতে জল পরিস্রুত করার পরেও থেকে যাচ্ছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া।
শহর ও শহরতলির অনেকেই বোতলবন্দি পানীয় জল খেতে অভ্যস্ত। কুড়ি লিটারের জারে আসে সেই জল। পুরসভার জলে তাঁদের বড় অনীহা। অনেক জায়গাতেই দেখা যায়, টোটো বা রিকশ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জলের জার। পানীয় জল বলেই তা বিক্রি হচ্ছে। এই জল পানের যোগ্য কি না, তা না জেনেই কিনছেন অনেকে।
কিছুদিন আগে আনন্দপুর এলাকায় একটি বোতলবন্দি পানীয় জল তৈরির ইউনিটের খোঁজ পায় ইবি। সেখানে গিয়ে অফিসাররা দেখেন, বিআইএস বা ফ্যাসাইয়ের ছাড়পত্র নেই তাদের। এমনকী ট্রেড লাইসেন্সও নেই। ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, বোরিং মেশিন দিয়ে মাটির নীচে থেকে জল তোলা হচ্ছে। সেই জলই ভরা হচ্ছে নানামাপের বোতলে ও জারে। পরীক্ষার বালাই নেই। এরপর সেই জল চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে।
নিয়ম বলছে, বোতলবন্দি পানীয় জলের ইউনিট খুলতে গেলে ল্যাবরেটরি থাকা বাধ্যতামূলক। সেখানে জল পরীক্ষা করার কথা। তাতে আর্সেনিক বা অন্য কোনও ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া আছে কি না, তা যাচাই করা দরকার। যদি আর্সেনিক বা ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ মেলে তাহলে সেই জল ব্যবহার করা যায় না। প্লান্টে ওজোন ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থাও থাকা বাধ্যতামূলক। অপরিশোধিত জলের ৭০ শতাংশ ব্যবহার করা যায়, বাকি ৩০ শতাংশ ফেলে দিতে হয়। মাটির নীচে জলের উৎস বা অন্য কোনও সোর্স থেকে জল নেওয়া যেতে পারে। তবে বোরিং করে জল তোলার নিয়ম নেই।
তদন্তে উঠে এসেছে, পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা পানীয় জলের প্লান্টগুলি কোনও নিয়ম মানছে না। বোরিং করে তোলা জলে ক্লোরিন মিশিয়ে তা শোধন করা হচ্ছে। অনেক সময় আবার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্লোরিনও দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই প্লান্ট খুলতে খরচ তিন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা। অথচ পুঙ্খানুপুঙ্খ নিয়ম মেনে ইউনিট খুলতে গেলে খরচ পড়ে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা। এই সব বোতল বা জারের জল খেয়েই অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। শুরু হচ্ছে পেটের গণ্ডগোল।