কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মানল না বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃত তিন পড়ুয়াকে ক্লাসে ফেরাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি। তাঁরা ক্লাসে ফিরতে চেয়ে বিশ্বভারতীর প্রোক্টরকে ই–মেল করেন। কিন্তু তাঁরা কোনও সাড়া বা সদুত্তর দেয়নি। ফলে, তাঁরা এদিন ক্লাসে যোগ দিতে পারেননি। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী হাইকোর্টের রায় না মানলেও আন্দোলনকারীরা বিচারপতির নির্দেশ মেনে খুলে ফেলেছেন অবস্থান মঞ্চ। আগামী বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
বিচারপতি রাজশেখর মান্থা আন্দোলন নিয়ে মামলার পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, তিন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে এবং তার ভিত্তিতে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তা লঘু পাপে গুরু দণ্ড। ওই তিন বহিষ্কৃত পড়ুয়াকে ক্লাসে ফেরানোর জন্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন বিচারপতি। মন্তব্য করেন, উপাচার্য যদি নিজেকে আইনের থেকে বড় ভাবেন তাহলে তাঁকে উপযুক্ত শিক্ষা দেবে আদালত। সেই নির্দেশকে অবজ্ঞা করে নিজের অবস্থানে অনড় থাকলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
বিশ্বভারতীর প্রোক্টর শঙ্কর মজুমদারের বিশ্বভারতীর অফিসিয়াল ই-মেলে তিন বহিষ্কৃত পড়ুয়া সোমনাথ সৌ, ফাল্গুনী পান এবং রূপা চক্রবর্তী আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ক্লাসে ফিরতে চেয়ে আবেদন জানান। কিন্তু কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তার কোনও সদুত্তর আসেনি। তাই তাঁরা কোনও ক্লাসেই যোগ দিতে পারেননি।
অর্থনীতি ভবনের বহিষ্কৃত ছাত্র সোমনাথ সৌ বলেন, ‘বুধবার আদালতের রায় জানার পর বিশ্বভারতী তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে ভেবে আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও মেল বা বিজ্ঞপ্তি না পাওয়ায় কার্যত হতাশ হয়েছি। বৃহস্পতিবার অন্য সহপাঠীদের মারফত জেনেছি, স্নাতক স্তরের ‘ভারতীয় অর্থনীতি’ বিষয়ে অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনড় মনোভাবের জন্য আমি সেই ক্লাসে যোগ দিতে পারিনি।’
বহিষ্কৃত ছাত্রী রূপা চক্রবর্তী বলেন, ‘স্নাতকোত্তরস্তরে আমার যে কোর্সটি অসম্পূর্ণ রয়েছে তার পরীক্ষা ইতিমধ্যেই শেষ। তাই, এখন আমি কী করব তার জবাবদিহি কর্তৃপক্ষকেই করতে হবে। আমি পরীক্ষা দিয়েই উত্তীর্ণ হতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন সেই ব্যবস্থাই করে। তবে এখনও কোনও ই-মেল পাইনি। অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে ও সমস্ত রকম অবস্থান-বিক্ষোভ প্রত্যাহার করতে হবে, এমনটাই নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।’
বিশ্বভারতীর অর্থনীতি বিভাগের সাসপেন্ডেড অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় বের হওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সদর্থক মানসিকতার পরিচয় দেবে। কিন্তু রায়কে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে উপাচার্য ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নিজের অবস্থানে অনড় রইল। হাইকোর্টের রায়কে উপাচার্য গুরুত্ব না দিলেও আমরা বিচার ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই, অবস্থান মঞ্চ, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার প্রভৃতি তুলে দিয়েছি।’