চলে গেলেন বিশিষ্ট নাট্যকর্মী ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৫বছর। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয় ‘রঙ্গকর্মী’ নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতার। বাঙালি অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গে হিন্দিতে নাটক মঞ্চস্থ করে সাফল্যে পাওয়া যে দুজন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়। বাংলায় হিন্দি নাট্যকারদের মধ্যে আর একজন হলেন ১৯৭২ সালে ‘পদাতিক’–র প্রতিষ্ঠাতা শ্যামানন্দ জালান।
উত্তরপ্রদেশের নেরভা গ্রামের বাসিন্দা হলেও ঊষা দেবীর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা রাজস্থানে। সেখানেই ভারতনাট্যমের তালিম নেন তিনি। পরে কলকাতায় এসে শ্রী শিক্ষায়তন কলেজে ভর্তি হন এবং হিন্দি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। ১৯৭০ সালে ভবানীপুর কলেজের হিন্দি শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন। সঙ্গীত কলা মন্দিরে যোগ দিয়ে শূদ্রক রচিত ‘মৃচ্ছকটিকম’ অবলম্বনে ‘মিট্টি কি গাড়ি’ নাটকে বসন্তসেনার অভিনয় দিয়ে তাঁর প্রথম অভিনয় জীবনে হাতেখড়ি।
১৯৭৬ সালে নিজের নাটকের দল ‘রঙ্গকর্মী’–র প্রতিষ্ঠা করেন ঊষা দেবী। বিশিষ্ট প্রয়াত নাট্যকার তৃপ্তি মিত্র এবং প্রয়াত পরিচালক মৃণাল সেনের কাছে তালিম নেওয়ার পর ১৯৮০ সালে নিজেই নাটক পরিচালনা শুরু করেছিলেন ঊষা। তাঁর পরিচালিত উল্লেখ্যযোগ্য নাটকের মধ্যে আছে ‘মহাভোজ’, ‘রুদালি’, ‘হোলি’, ‘সরহদ পার মান্টো’, ‘চণ্ডালিকা’–র মতো নাটক। ১৯১১ সালে তাঁর পরিচালিত বাংলা নাটক ‘মানসী’। ২০০৩ সালে কাশীনাথ সিং–এর গল্প ‘কানে কৌন কুমতি লাগি’ অবলম্বনে ‘কাশিনমামা’ নাটক লেখেন তিনি। ২০০৪ সালে ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ‘রেইনকোট’ ছবির চিত্রনাট্য লিখতেও সহায়তা করেছিলেন তিনি।
১৯৯০ সাল থেকে কলাপ্রেমীদের নাট্যশিক্ষা পাঠ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সফর শুরু করে ‘রঙ্গকর্মী’। ২০০৫ সালে জার্মানির স্টুটগার্টের নাট্যোৎসবে অভিনয় করা একমাত্র ভারতীয় দল ছিল ঊষার ‘রঙ্গকর্মী’। ১৯৯৮ সালে পরিচালনার জন্য সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। তৃপ্তি মিত্রর পরিচালনায় ইবসেনের নাটক ‘আ ডলস্ হাউস’ অবলম্বনে ‘গুড়িয়া ঘর’–এ অভিনয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও পেয়েছিলেন বিশিষ্ট নাট্যকর্মী ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর মৃত্যুর খবরে শোকজ্ঞাপন করেছে রাজ্য সরকার।