মোদী–শাহের বঙ্গজয়ের ‘স্বপ্ন’ চুরমার করে দেশের বিরোধী রাজনীতির প্রধান মুখ এখন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী সরকারের রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে ভাঙা পায়ের একার লড়াই চর্চিত হচ্ছে গোটা দেশে। এমন একটা আবর্তে বাংলার নিজের মেয়েকে ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের (ইউপিএ) ‘মুখ’ করে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদী–শাহের বিরুদ্ধে লড়তে চাইছে বিরোধী শিবির। এনসিপি, ডিএমকে, ন্যাশনাল কনফারেন্স, আরজেডি, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, জনতা দল (এস)–এর মতো ইউপিএ দলগুলি তো বটেই, এমনকী তৎপরতা শুরু হয়েছে কংগ্রেসের অন্দরেও।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সোনিয়া–রাহুলের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের একটি অংশ দলে সংস্কার চেয়েছিল। তারাই জি–২৩। গুলাম নবি আজাদ, কপিল সিবাল, শশী থারুর, মণীশ তেওয়ারি, রেনুকা চৌধুরী এবং মিলিন্দ দেওরার মতো কংগ্রেস নেতারা রয়েছেন এই গ্রুপে। তাঁদের সঙ্গে মমতার সম্পর্ক সখ্যের বলেই খবর। তাঁকে ঘিরে বিরোধী শিবিরের একজোট হওয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা যথেষ্ট গুরুত্ব এবং আন্তরিকতার সঙ্গে বিচার করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বিজেপি অপশাসনের বিরুদ্ধে সমমনোভাবাপন্ন দলগুলি একজোট হলে, তিনি যে সেই প্রক্রিয়াকে অবশ্যই স্বাগত জানাবেন, ঘনিষ্ঠ মহলে বারবার বলছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
তৃণমূল সূত্রের খবর, মমতাকে সামনে রেখে বিজেপি বিরোধী জোটের যে বার্তা দেশজুড়ে ছড়িয়েছে, তার প্রধান কারিগর এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার। মহারাষ্ট্র রাজনীতির পাওয়ার ম্যান গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে মমতাকে সর্বভারতীয় বিরোধী শিবিরের মুখ বানাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনেও মমতাকে প্রকাশ্যে সমর্থনে দিয়েছেন পাওয়ার। ল্যান্ডস্লাইড ভিকট্রির পর অভিনন্দনে ভরিয়েছেন ট্যুইটার। এম কে স্ট্যালিন, চন্দ্রশেখর রাও, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মেহেবুবা মুফতি, অখিলেশ যাদব, ওমর আবদুল্লার মতো নেতাদের সঙ্গেই সংযোজিত হয়েছে আর একটি নাম—উদ্ধব থ্যাকারে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, গত মে মাসে বিরোধীদের তরফে প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো পরপর দু’টি চিঠি। সেই দু’টিকে ‘বিরোধী জোটের ট্রায়াল রান’ও বলছেন অনেকে। সবার জন্য ভ্যাকসিনের দাবিতে গত ২ মে পাঠানো প্রথম চিঠিতে সোনিয়া গান্ধী, শারদ পাওয়ার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরোধীদের সঙ্গেই সই করেছিলেন সিপিআইয়ের ডি রাজা এবং সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি। লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে এই আট রাজ্যেই রয়েছে ২১৪টি। বাংলার ভোটের পর আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে বিরোধী শিবির, আর তা অবশ্যই মমতাকে ঘিরে।
