গত বছর পুজোয় করোনাভাইরাসের দাপটের পর এবারও চোখ রাঙাচ্ছে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ। তারই মধ্যে উত্তর থেকে দক্ষিণ, জ্বরে কাঁপছে বাংলা। ১৪ জেলায় আক্রান্ত ১৩০০-এর বেশি শিশু। জলপাইগুড়িতে এখনও পর্যন্ত চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মালদহে মৃত্যু হয়েছে মোট পাঁচজনের। উৎসবের বাংলায় যেন নতুন বিপদের ঘনঘটা।
মালদহ—ঠেকানো যাচ্ছে না শিশুমৃত্যু। শুক্রবার মালদহে দুই শিশু মারা গিয়েছে জ্বরে। এই নিয়ে মোট পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়েছে এই জেলায়। যদিও এরপরই স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের আশ্বাস, ‘উদ্বেগের কারণ নেই’! জেলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশাপাশি রোজই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে ভিড় করছেন মায়েরা।
দার্জিলিং—দু’দিন পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত পাঁচ শিশু। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি ৬৭ শিশু। এদের মধ্যে ১৫ জনের এখনও জ্বর রয়েছে। শিশু মৃত্যুর কারণ খুঁজতে স্বাস্থ্য দফতরের চার সদস্যর দল শুক্রবারই যান সেখানে। শিশু ওয়ার্ড পরিদর্শনের পর বৈঠক করেন চিকিৎসকদের সঙ্গে। পরে শিলিগুড়ি হাসপাতালের পরিস্থিতিও খতিয়ে দেখেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা।
জলপাইগুড়ি—গত তিনদিনের তুলনায় জলপাইগুড়ির পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। জেলা হাসপাতাল পরিদর্শনের পর চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালেই ১০৫ শিশু ভর্তি।
পূর্ব মেদিনীপুর—দক্ষিণবঙ্গেও হু হু করে শিশুদের মধ্যে জ্বরের প্রকোপ। এগরা হাসপাতালে ভর্তি ৮০ শিশু। কাঁথি হাসপাতালে ভর্তি ৯০ শিশু। আরএস ভাইরাসের প্রকোপই এখানে বেশি বলে দাবি চিকিৎসকদের। আতঙ্কিত মানুষজন।
বাঁকুড়া—৭৫ জনের বেশি শিশু বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। পরীক্ষার পর উঠে আসছে ভয়ের তথ্য। স্ক্রাব টাইফাস, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, জাপানি এনসেফালাইটিসে আক্রান্ত একাধিক শিশু। রয়েছে আরএস ভাইরাস, ইনফ্লুয়েজ্ঞাজনিত সংক্রমণও। গত এক মাসে ২৫ শিশুর শরীরে মিলেছে স্ক্রাব টাইফাস সংক্রমণ। নিকু, পিকু ও শিশু ওয়ার্ডে সমস্ত বেড ভর্তি।
নদীয়া—কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচজন শিশু। কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে জ্বর উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন প্রায় ৫০ শিশু। তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচজন শিশু। রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন সাতজন শিশু।
কোচবিহার— ১১৩ জন শিশু আক্রান্ত জ্বরে। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর মিলিয়ে ১৫৬ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি। আলিপুরদুয়ারে জ্বরে ভুগছে ১১২ শিশু। পুরুলিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ২৩৫ জন। মুর্শিদাবাদে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ১৫০ শিশু। পশ্চিম বর্ধমানে এই সংখ্যাটা ১৯০। হুগলিতে চিকিৎসাধীন ৬৪ শিশু।
জ্বরের প্রাদুর্ভাব নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর বক্তব্য, “বছরের এই সময়ে প্রতিবারই শিশুদের মধ্যে ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। তার মানে এই নয় যে কিছুই ঘটেনি। রোগ যখন হচ্ছে। শিশুদের আইসিইউয়ে ভর্তি যখন করতে হচ্ছে তখন কিছু একটা কারণও নিশ্চিত রয়েছে।”