দেশজুড়ে উজ্জ্বলা যোজনার দ্বিতীয় পর্বের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গালভরা নাম, উজ্জ্বলা ২.০। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এক কোটি গ্রাহককে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে’। অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলার মানুষও আশায় ছিলেন, তাঁরা কেন্দ্রের ওই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। কিন্তু বাস্তবে বাংলা দেখল, এই সুবিধা সবার জন্য নয়। এই রাজ্যের মাত্র তিনটি জেলায় গরিবদের উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। বাকি জেলাগুলি এই একই সুবিধা কেন পাবে না? উঠছে প্রশ্ন। অন্ধকারে ডিলাররাও।
আগস্ট মাসের গোড়ার দিকে উজ্জ্বলার দ্বিতীয় পর্যায়ের গ্যাস সংযোগের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তার দেড় বছর আগে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। সেবার আট কোটি গরিবকে ওই প্রকল্পের আওতায় আনার দাবি করেছিল কেন্দ্র। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর আগে সমস্ত গ্যাস ডিলারকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন সম্ভাব্য গ্রাহকদের তালিকা তৈরি করে। এলাকায় আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা যে যে পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারে, তার হিসেব রাখার কাজ সেরেও রেখেছিল ডিলাররা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সব ডিলারকে উজ্জ্বলা যোজনার সিলিন্ডার বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এই রাজ্যে সেই অনুমতি পেয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং মালদহের ডিলাররা। প্রকল্প চালুর কয়েকদিন পর আবার বাঁকুড়া, মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে বাকি তিন জেলায় উজ্জ্বলার কাজ চলছে।
কেন এই বৈষম্য? এই রাজ্যের শাসকদলের একাংশ অভিযোগ করছে, গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোটবাক্সের সিংহভাগ ছিল বলতে জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গ। তারাই মূলত অক্সিজেন জুগিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় ইনিংসে। কিন্তু জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা বুঝেছিলেন, মেঘ শুধু গর্জেছে। বর্ষায়নি। প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার। তাই গত বিধানসভা ভোটে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল জঙ্গলমহল। আবার উত্তরবঙ্গে বিজেপি ভালো ফল করলেও মালদহ ও দুই দিনাজপুর অনেকটাই হতাশ করেছে বিজেপিকে। ফলে এখানেও এক স্ট্র্যাটেজি। অর্থাৎ দিনের শেষে লক্ষ্য সেই পাহাড় ও জঙ্গলমহল। তাই উজ্জ্বলার দরজা খুলেছে ওই দু’টি অঞ্চলেই।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দেশে দ্বিতীয় পর্যায়ের উজ্জ্বলা স্কিমে প্রায় ১২ লক্ষ ১৯ হাজার গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছে ২ লক্ষ ৩৯ হাজার সংযোগ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, বিহারে যেখানে মোট ৩৮টি জেলাকে উজ্জ্বলা বিতরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেখানে বাংলার মাত্র দু’টি কেন? উঠেছে প্রশ্ন।