গলওয়ান উপত্যকায় শহিদ ভারতীয় সেনার তালিকায় রয়েছেন দুই বঙ্গসন্তানও। এদের একজনের বাড়ি বীরভূমে, অন্যজনের আলিপুরদুয়ারে। দেশের মাটিকে বাঁচানোর জন্য কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন দু’জনেই। চিনের সেনার সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিজেদের প্রাণ বলিদান দিলেন দুই বীর বাঙালি। তবে উদাহরণও হয়ে রইলেন। বাঙালিরা সাহসী। দেশের জন্য প্রাণও দিতে পারে। বাংলা মায়ের এই দুই বীর সন্তানকে সবাই মনে রাখবেন সাহসীকতার জন্য।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বীরভূমের মহম্মদবাজার থানার ভূতুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলগাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা রাজেশ ওঁরাও। ২০১৫ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। দেশের জন্য কাজ করার ইচ্ছা ছিল স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। নিজের মনকেও প্রস্তুত করেছিলেন রাজেশ বজ্রকঠিনভাবেই। কলেজে পড়ার সময় দ্বিতীয় বর্ষেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বাবা অসুস্থ থাকাকালীন অল্প বয়সেই পরিবারের সব দায়িত্ব হাসিমুখে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। ছোট বোনের বিয়ে দেওয়া থেকে মাঝে মাঝে টাকা পাঠানো। কিন্তু সব থেমে গেল হঠাৎই। দেশের মাটিকে নিজের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে বাঁচিয়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন রাজেশ।
টিভির পর্দাতেই ছেলের মৃত্যুর খবর শুনেছে পরিবার। ওঁদের কাছে গোটা পৃথিবীটাই অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে। তবে ছেলে হারানোর যন্ত্রণার সঙ্গে ছেলে বীরের মৃত্যুবরণ করায় বুক গর্বে ভরে উঠেছে রাজেশ ওঁরাওয়ের বাবা–বোনের। অসুস্থ বাবাকে দেখতে আট মাস আগে বাড়ি এসেছিলেন তিনি। সেটাই ছেলের সঙ্গে শেষ দেখা। লকডাউন উঠলেই ফের আসার কথা ছিল রাজেশের। রাজেশ আসছেন বাড়ি, কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে।
অন্যদিকে লাদাখে চিনের সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে শহিদ হয়েছেন আলিপুরদুয়ারের দুই নম্বর ব্লকের বিন্দিপাড়ার বাসিন্দা বিপুল রায়। তাঁর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা এলাকায়। সাধারণ বাড়ির ছেলে বিপুলেরও বাড়ি আসার কথা ছিল। সেটাও আসছে কফিনবন্দি হয়ে। কান্নার রোল উঠেছে বাড়িতে। ছেলে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ায় পরিবারের অবস্থা ফিরেছিল। আজ সব যেন বদলে গেল। চোখে ধোঁয়া দেখছে সদস্যরা। লকডাউন উঠলে বাড়ি আসার কথা ছিল তাঁর। এলাকায় পরোপকারী ছেলে হিসাবেই পরিচিত বিপুল। বন্ধু–বান্ধবরা বিশ্বাস করতে পারছেন না। ও যে কথা দিয়েছিল আসবে!
