খেলাধুলা জেলা

স্বপ্নের উড়ান, পিংলা থেকে টোকিও অলিমপিক্সে বাংলার মেয়ে

এই অসাধ্য সাধন প্রথম করেছিলেন দীপা কর্মকার। কিন্তু অল্পের জন্য অলিম্পিক পদক হাতছাড়া হয়ে তাঁর। ভারতের খেলাধুলোর ইতিহাসে দ্বিতীয় জিমন্যাস্ট হিসাবে অলিম্পিক্সের যোগ্যাতা অর্জন করলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার মেয়ে প্রণতি নায়েক। ২০২১ টোকিও অলিম্পিক্সে দেখা যাবে বাংলার মেয়েকে। বেসরকারি দূরপাল্লার বাস ড্রাইভার শ্রীমন্ত নায়েক, তাঁরই কন্যা প্রণতি। দারিদ্রতা নিত্যসঙ্গী, তাই মেয়ের পড়াশোনা ও দেখভালের জন্য ঠাঁই হয়েছিল পিংলায়, মাসির বাড়িতে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা, তাও প্রণতি স্বপ্ন দেখেছিল বড় জিমন্যাস্ট হওয়ার। পিংলাতেই হাতেখড়ি জিমন্যাস্টিকের। আর ছোটবেলা থেকেই ভালো করে দুমুঠো খাবার জোটেনি প্রণতির। আর সেই কিনা জিমন্যাস্টিক্সের মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করলো?

প্রণতির কথায়, পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে সে দীর্ঘদিন শুকনো মুড়ি খেয়ে প্র্যাকটিস করেছে। তবুও হাল ছাড়েনি সে। অভুক্ত পেটই তৈরি করেছে নাছোড় জেদ। ফলে জিমন্যাস্টিক্সের মঞ্চে সে নিজেকে প্রমাণ করেই ছাড়লো। দীপা কর্মকারের পর বাংলা থেকে প্রথম জিমন্যাস্ট হিসেবে প্রণতি যাচ্ছে টোকিও। বর্তমানে সে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে সল্টলেকের SAI (স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) কমপ্লেক্সে।

কোচ মিনারা বেগমের সঙ্গে প্রণতি

পিংলাতেই জিমন্যাস্টিক্স শুরু প্রণতির। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে শুভাশিষ চক্রবর্তীর কাছে জিমন্যাস্টিক্সে হাতেখড়ি। সেই তখন থেকেই বাধ্য ছাত্রী সে। চরম দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে চালিয়ে গিয়েছে অনুশীলন। জেলাস্তরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রাজ্য পর্যায়ে খেলতে প্রথমবার কলকাতায় আস। প্রণতির কথায়, আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন বয়স মাত্র ৮ বছর। সাইতে ভর্তি হতে না পারলেও কোচ মিনারা বেগমের কাছে সুযোগ হয়ে যায়। কলকাতায় থাকা ও খাওয়ার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল নায়েক পরিবারকে। ছোট্ট মেয়ের সঙ্গে কখনও বাবা, কখনও মা থেকেছেন। মিনারা বেগমের বাড়িতেই থেকেছে সে, পরে জাতীয় মিটে সোনা জিতে নজর কেড়ে নেয় প্রণতি। সকালে ও বিকেলে তিন ঘন্টা করে প্র্যাকটিস করে আসছে সে। ফলে ২৬ বছর বয়সে এসে স্বপ্ন পূরণ হল প্রণতি নায়েকের। মহিলাদের অল-অ্যারাউন্ড ইভেন্টে যোগ্যতা অর্জন করার পরেই টোকিও অলিম্পিকের ছাড়পত্র পান প্রণতি নায়েক।