শেষ কয়েকদিনের মধ্যে তৃণমূল ছেড়েছেন একাধিক বিধায়ক। একটি মহলের দাবি, গত লোকসভা ভোটে নিজের কেন্দ্রে বিরোধী দলের প্রার্থীর থেকে পিছিয়ে ছিলেন তাঁদের অনেকেই। জনসমর্থন হারিয়েছেন বুঝতে পেরেই তাঁরা শিবির বদল করছেন। আর আগামী বছরেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে তৃণমূলে লেগেছে দলত্যাগের হিড়িক।
মিহির গোস্বামীর বিধানসভা কেন্দ্র হল—কোচবিহার দক্ষিণ। মিহিরবাবু এখন বিজেপিতে। এখানে লোকসভা কেন্দ্র কোচবিহার (তফশিলি)। পরেশচন্দ্র অধিকারী (তৃণমূল)–৮০,৪১০ ভোট পেয়েছিলেন। আর নিশীথ প্রামাণিক (বিজেপি)–৮৬,৪৩১। বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে প্রথম দলত্যাগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বিধানসভা: নন্দীগ্রাম। লোকসভা: তমলুক। দিব্যেন্দু অধিকারী (তৃণমূল)–১,৩০,৬৫৯ ভোট। আর সিদ্ধার্থশঙ্কর নস্কর (বিজেপি)–৬২,২৬৮ ভোট পেয়েছিলেন।
ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে সমস্যা চলছিল জিতেন্দ্রর। খোদ মুখ্যমন্ত্রী ফোন করে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। শুক্রবার বৈঠকে ডাকেন। তবে তার আগেই আসানসোল পুরনিগমের প্রশাসক পদে ইস্তফা দেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ছাড়েন দলও। তবে শুক্রবার রাতে অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে বৈঠকের পর সমস্যা মিটে গিয়েছে বলেই জানান তিনি। এখানে বিধানসভা: পাণ্ডবেশ্বর। লোকসভা: আসনসোল। মুনমুন সেন (তৃণমূল)–৬৪,২৭৫ ভোট এবং বাবুল সুপ্রিয় (বিজেপি)–৭০,২৯৬ ভোট পেয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবারই পদত্যাগ করেছেন কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী। এসবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান পদে ছিলেন তিনি। আসানসোল পুরসভার প্রশাসকের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ দুই কাউন্সিলর অমিত তুলসিয়ান ও অভিজিৎ আচার্য এবং কর্পোরেশনের লিগাল অ্যাডভাইজার রবিউল ইসলাম। শুভেন্দু অধিকারীই অভিভাবক, তাঁর সঙ্গেই থাকব বলে তৃণমূল ছাড়েন বাঁকুড়ায় তৃণমূলের সহ–সভাপতি তথা একাধিক দপ্তর সামলানো প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে দল ছাড়েন আরও তিন যুব নেতা। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পথ অনুসরণ করে তৃণমূল ছাড়েন বাঁকুড়ার ১২ জন তৃণমূল নেতা। তাঁদের মধ্যে একজন বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান, বাকি ১১জন কাউন্সিলর।
এখানের বিধানসভা: বিষ্ণুপুর। লোকসভা: বিষ্ণুপুর (তফশিলি)। শ্যামল সাঁতরা (তৃণমূল)–৬৬,৯৮৮ ভোট পান। সৌমিত্র খাঁ (বিজেপি)–৮৯,০৬৮ ভোট পেয়েছিলেন। পুরুলিয়া জেলায় দলের সাধারণ সম্পাদক তথা রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ও পদত্যাগ করেছেন। ডানকুনি পুরসভার বিদায়ী ভাইস–চেয়ারম্যান তথা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার পুরসভা এবং তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন। বারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত শুক্রবার সকালে নিজের ইস্তফাপত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠিয়ে দেন।
এখানে বিধানসভা: ব্যারাকপুর। লোকসভা: ব্যারাকপুর। দীনেশ ত্রিবেদী (তৃণমূল)–৬০,৫২৭ ভোট পান। আর অর্জুন সিং (বিজেপি)–৬৪,০৪৬ ভোট পেয়েছিলেন। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হিসেবেই রাজনৈতিক মহলে পরিচিত তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সাধারণ সম্পাদক কবিরুল ইসলামও দল ছাড়েন। অনুব্রত মণ্ডলের গড় বীরভূমেও তৃণমূলে ফাটল। পদত্যাগ করেন সিউড়ি ১ নম্বর ব্লকের কার্যকরী সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য ও প্রাণী কর্মাধ্যক্ষ করম হোসেন খান। মেদিনীপুর পুরসভার দু’বারের চেয়ারম্যান প্রণব বসুও ঘাসফুল শিবির ছেড়েছেন শুক্রবার। পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূলের অন্যতম সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু আচার্যও পদত্যাগ করেন। তৃণমূল ছাড়েন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের শিক্ষা, তথ্য–সংস্কৃতি ও ক্রীড়া দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ ফিরোজ কামাল গাজি ওরফে বাবু মাস্টার। পাশাপাশি কাঁথি উত্তর বিধানসভার বিধায়ক বনশ্রী মাইতিও তৃণমূল ছাড়েন।
এখানের বিধানসভা: কাঁথি উত্তর। লোকসভা: কাঁথি। শিশির অধিকারী (তৃণমূল)-১,০৫,০৩৩ ভোট পান। আর ডা. দেবাশিস সামন্ত (বিজেপি)- ৯১,৯৫৯ ভোট পেয়েছিলেন। একের পর এক দলত্যাগে অস্বস্তিতে ঘাসফুল শিবির। শোনা যাচ্ছে, দলত্যাগীদের মধ্যে অধিকাংশই যোগ দিতে চলেছেন গেরুয়া শিবিরে। তাই শনিবারের অমিত শাহের সভার দিকে নজর রয়েছে সকলের।
