আউশগ্রামে তৃণমূল নেতা চঞ্চল বক্সি খুনের ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করল পুলিশ। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট ও পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের যৌথ প্রতিনিধিত্বে তদন্ত শুরু হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের ভাই রাহুল বক্সি। অভিযোগ পেয়ে খুনের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। দেবশালায় যায় সিআইডির বর্ধমান শাখার চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা উলুগড়ির জঙ্গলে ঘটনাস্থল ভালোভাবে পরীক্ষা করে।
সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে। মৃতদেহ যেখান পড়েছিল, তার কিছুটা দূরেই একটি পিস্তল উদ্ধার হয়। তাছাড়া কিছুটা দূরেই একটি জামা উদ্ধার হয়। প্রতিটি জায়গা আলাদা আলাদাভাবে সিআইডির প্রতিনিধি দল খুঁটিয়ে দেখে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর নিহতের দেহ থেকে দুটি গুলি পাওয়া গিয়েছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। ঘটনার তদন্তের জন্য একটি সিট গঠন করা হয়েছে।’
এদিন সিআইডি অফিসাররা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর নিহত নেতার বাড়িতে যান। এই খুনের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী চঞ্চলের বাবা তথা দেবশালা পঞ্চায়েত প্রধান শ্যামল বক্সির সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন তাঁরা। এছাড়াও এদিন নিহত নেতার বাড়িতে আসেন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি। তিনিও শ্যামলবাবুর সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ শুনে তথ্য সংগ্রহ করছেন অফিসাররা। মৃতের ভাই রাহুল বক্সি বলেন, ‘দাদা ও বাবা দু’জনেই এলাকায় খুব জনপ্রিয়। এভাবে নৃশংসভাবে ওকে খুন করা হল। এর পিছনে কী কারণ, তা পুলিশ তদন্ত করুক। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। প্রশাসনের উপর আমাদের ভরসা আছে।’
পঞ্চায়েত প্রধানের ঘনিষ্ঠ আফসার চৌধুরী বলেন, ‘রোজ শ্যামলবাবু আমার সঙ্গেই বাইকে যাতায়াত করেন। কিন্তু ওইদিন একটি নিমন্ত্রণ থাকার কারণে ছেলের বাইকে বের হন। বাড়ি ফেরার পথে দুপুর ৩টে নাগাদ চার দুষ্কৃতী দুটি বাইক নিয়ে ওঁদের ধাওয়া করে। চলন্ত বাইক থেকেই পাঁচটি গুলি চালায় বলে জানতে পারি। পরিকল্পনা করেই ওঁকে খুন করেছে তা পরিষ্কার। এদিকে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও দেবশালা এলাকায় আতঙ্কের রেশ কাটেনি। এলাকার দোকানপাটও সব বন্ধ ছিল।’
এদিন ঘটনার প্রতিবাদে দুই জায়গায় বেশ কিছুক্ষণ ধরে পথ অবরোধ করেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে দোষীদের খুঁজে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এই খুনের ঘটনায় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তা অস্বীকার করেছে গেরুয়া শিবির। উল্টে এটি শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের বলে দাবি করেছে তারা। জেলা সদরের বিজেপি নেতা সন্তোষ রায় বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক খুন। তবে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে এমনটা ঘটেছে। অথচ বিজেপির নামে চাপানো হচ্ছে। বর্তমানে একাধিক কেসে হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত চলছে। এই কেসটা সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হোক। আসল সত্যি বাইরে চলে আসবে।’