পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজেদের বাড়ি ফিরে এলে রাজ্যের করোনা–রোগীর সংখ্যা যে আরও বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পাবে তা আন্দাজ করাই হচ্ছিল। এবার গ্রিন জোনের তকমা ঘুচল পশ্চিমবঙ্গের আরও দুই জেলার। করোনা পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠেছে হুগলির। এছাড়া কলকাতা–সহ হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বেড়েছে কনটেইনমেন্ট জোন। তবে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হুগলির কনটেইনমেন্ট জোনগুলি মাথা ব্যথা বাড়ছে স্বাস্থ্য ভবনের। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওই ৩ জেলাতেই কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে তৈরি বিশেষ নজরদারি টিম কাজে নামছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, করোনা সংক্রমণের তালিকায় এবার নাম লিখিয়েছে উত্তর দিনাজপুর আর ঝাড়গ্রাম জেলাও। দুই জেলাতেই আক্রান্ত তিনজন করে। ফলে কনটেইনমেন্ট জোনে নজরদারি, সংক্রমণ ঠেকানোর পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহে ৪ জন করে কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষকদের নিয়ে তৈরি দল ঘুরে দেখবে। ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলিতে ওই বিশেষ টিম তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং কিভাবে সেখানে সংক্রমণ আটকানো যায় সেই বিষয়ে পরিকল্পনা করে স্বাস্থ্য ভবনকে তাঁরা রিপোর্ট দেবেন।
সূত্রের খবর, দুই জেলার আক্রান্তরাই কিছু দিন আগেই জেলায় ফিরেছেন। কেউ দিল্লি থেকে বা কেউ কলকাতা থেকে। ফলে পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে দিয়ে সংক্রমণ বাড়ার ব্যাপারটি বাস্তব রূপ নিচ্ছে। সন্দেহভাজনদের দেখলেই কোয়ারান্টাইন কেন্দ্র পাঠানো হচ্ছে। ফলে উত্তর দিনাজপুর আর ঝাড়গ্রামের আক্রান্তদের মধ্যে দিয়ে সংক্রমণ বিশেষ ছড়াবে না বলেই আশা করছে প্রশাসন। জেলার কনটেইনমেন্ট এলাকায় কি কি করা উচিত এবং কি কি তথ্য রয়েছে তা প্রত্যেকদিন সন্ধ্যে ৬টার মধ্যে স্বাস্থ্য ভবনকে জানাবে ওই দল।
এদিকে শুক্রবার থেকে উত্তর দিনাজপুরে বাছাই করা কিছু রুটে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। সোমবার থেকে ঝাড়গ্রামেও বাস চলাচল শুরু হওয়ার কথা ছিল। যা চিন্তায় ফেলেছে প্রশাসনকে। এখনও অরেঞ্জ জোনে আসেনি এই দুই জেলা। বাস চলাচলের ব্যাপারেও স্পষ্ট করে কোন নির্দেশিকাও আসেনি।
অন্যদিকে হুগলির পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় হুগলিতে আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি। কলকাতায় যেখানে নতুন করে ৩৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, সেখানে হুগলিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯। চন্দননগরের নির্দিষ্ট একটি জায়গা থেকে অধিকাংশ আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। চন্দননগর পুরসভার ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড সংলগ্ন উর্দিবাজার এলাকার পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠছে। ওই অঞ্চলে স্থানীয় সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, হুগলির ডানকুনি, শ্রীরামপুর, রিষড়া, আরামবাগ থেকেও কোভিড–১৯ রোগীর সন্ধান মিলেছিল। কিন্তু কোনও জায়গাতেই সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়ায়নি। যেটা চন্দননগরের ক্ষেত্রে হচ্ছে। উর্দিবাজার এলাকা সিল করে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। পাশাপাশি সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ , ডায়মন্ডহারবার মেডিকেল কলেজ, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের চারজন করে চিকিৎসককে নিয়ে এই বিশেষ নজরদারি তিনটি দল তৈরি করা হয়েছে।
