দেশ ব্রেকিং নিউজ

গোপন প্ল্যান ফাঁস বিজেপির

বিধানসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোটের পরই একটি রিপোর্ট আসে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। সেই রিপোর্টে দেখা যায়, বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় তো আসছেই না। এমনকী আসন সংখ্যাও এই তিন দফায় তেমন কিছু জোটেনি। এই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর গভীর রাতে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। তখন ঠিক হয়, এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে গেলে আরও আগ্রাসী হয়ে উঠতে হবে। আর রাজ্য নেতৃত্বকেও সেই কথা পরেরদিন সকালে জানিয়ে দেওয়া হয়।
কী সেই বিকল্প পথ?‌ সূত্রের খবর, ঠিক হয়– নীচুতলার নেতা, কর্মী এবং সমর্থকরা হুইসপারিং ক্যাম্পেন করবে এই বলে যে, তাঁরা ২ মে ক্ষমতায় আসছে। এমনকী সেই গ্রাউন্ড রিপোর্ট তারা পেয়ে গিয়েছে। আর শীর্ষ নেতৃত্ব প্রকাশ্য সভা থেকে বলবেন, তৃণমূল কংগ্রেস হেরে যাচ্ছে। ২ মে বিজেপি সরকার তৈরি হতে চলেছে। ফলাফল তাই বেরোবে। তারপর থেকেই লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রী বাংলায় প্রচার করতে এসে বলছেন, ২ মে পরিবর্তনের পরিবর্তন হবে। বাংলায় বিজেপি সরকার গঠন হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেরে যাবেন। সোনার বাংলা গঠন হবে।
কিন্তু এটা বলার কারণ কী?‌ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজ্য বিজেপি নেতার কথায়, ‘‌এই প্রচার মানুষের মনে একটা রেখাপাত করবে। এমনকী জনসমর্থন তৈরি হবে। ফলে বাকি দফাগুলিতে ভোটবাক্স উপচে পড়বে। কারণ মানুষ বারবার যদি শোনে বিজেপি জিতবে তাহলে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট না দিয়ে সেই ভোট বিজেপিতে গিয়ে পড়বে। এটা সাধারণ ভোটার এবং নতুন প্রজন্মকে টানবে।’‌ এই কৌশল ঠিক হয়েছে দিল্লিতে। যা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
এদিকে পঞ্চম দফার আগে থেকেই যে বিধানসভা আসনগুলিতে এখনও ভোট বাকি রয়েছে সেখানে বাড়ি বাড়ি প্রচারে যেতে চলেছে বিজেপি নেতারা। সেখানে গিয়েও একই কথা পৌঁছে দেওয়া হবে গৃহকর্তার কানে। যাতে ভোটটা বিজেপি পায়। প্রত্যেকদিন সকাল ৯টা থেকে ১১টা দু’ঘন্টার জন্য এই বাড়ি বাড়ি প্রচারে যেতে চলেছেন তাঁরা। সেখানে দলের নেতা–প্রার্থী এমনকী সেলিব্রিটিরাও পৌঁছে যাবেন দুয়ারে দুয়ারে। বিজেপি নিজেদের সংকল্পপত্র তুলে দেবে। কলকাতা ও শহরতলির মোট ৪০টি বিধানসভা আসনকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে পাড়ায় পাড়ায় চা–চক্রের আয়োজন করে এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে যে, বিজেপি ক্ষমতায় আসছে। তাই ভোট অন্য কাউকে দিয়ে নষ্ট না করে বিজেপিকেই দেওয়া হোক। শহরের মধ্যবিত্ত মানুষজন, প্রবীন নাগরিক, চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী–সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজনদের সঙ্গে জনসংযোগ ও ভোট প্রচার সারবেন বিজেপি নেতারা। এই কৌশলী প্রচারে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়–সহ শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকাররাও থাকবেন বলে সূত্রের খবর। দলের যেসব তারকা প্রার্থীদের ভোট হয়ে গিয়েছে তাদেরকে প্রচারে কাজে লাগানো হবে। তবে পাড়ায় পাড়ায প্রচার চা–চক্রের মাধ্যমে শুরু হয়ে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা একটি রিপোর্ট অমিত শাহের হাতে পৌঁছে দিয়েছে বলে খবর। সূত্রের খবর, সেই রিপোর্টে বিজেপির পক্ষে ভাল তথ্য নেই। বরং বাংলায় বিজেপির পক্ষে এককভাবে এই নির্বাচনে ২০০ আসন জেতা সম্ভব হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের ৫৪ বিধানসভা এবং জঙ্গলমহলের যে ৩৫ বিধানসভায় গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি দারুণ ফল করেছিল, দলের সাংগঠনিক নেতাদের ব্যর্থতায় সেখানে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকী শুভেন্দু অধিকারীর মতো কয়েকজন নেতা আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে নন্দীগ্রাম এবং রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার সংখ্যালঘু মুসলমানদের পাকিস্তানি বলে প্রকাশ্য জনসভা থেকে আক্রমণ করায় মুসলমান ভোটাররা সম্পূর্ণভাবে বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। এই গোয়েন্দা রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গের প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষিত হিন্দু ভোটার চুপচাপ বিজেপির পাশ থেকে সরে গিয়েছে। যাঁরা এখনও ভোট দেননি। এই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের ফোন করে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন অমিত শাহ বলে সূত্রের খবর। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রাজ্য নেতাদের মোট একশো আসন জিততে নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে থাকা যায়।