জেলা

জমিদাতারা পেলনা বকেয়া টাকা

প্রায় দীর্ঘ সাড়ে চার দশক পেরিয়ে গেলেও এখনও বকেয়া ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের নিত্যানন্দপুর জলাধারের জমিদাতা কৃষকরা। সম্প্রতি তারা তাদের বকেয়া ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে বিধায়কের দ্বারস্থ হয়ে তাদের দুর্দশার কথা জানান। শেষমেষ সোমবার তাদের আবেদনের ভিত্তিতে জলাধারের পাড় সংলগ্ন সারাঙ্গপুর গ্রামে এসে বৈঠক করলেন বড়জোড়ার বিধানসভার বিধায়ক আলোক মুখার্জী ।

১৯৭৮ সাল নাগাদ বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আশ্বিন হওয়ার সময় এই জলাধারটি বনানো হয় ।  সেই সময় এই জলাধার তৈরি করতে স্থানীয় নিত্যানন্দপুর, সারাঙ্গপুর, হদলবনি, চৈতন্যপুর গ্রামের শতাধিক কৃষক পরিবার তাদের কৃষি জমি দিয়েছিলেন। রাজ্য সেচদপ্তর কর্তৃক জমিদাতারা জমির ৮০% দাম পান। এবং দ্বিতীয় ধাপে বাকি ২০ % দাম দেওয়ার কথা থাকলেও প্রায় সাড়ে চার দশক অতিক্রম করলেও এখনও তাদের বকেয়া অর্থ দেওয়া হয়নি বলে জানা যায় । এদিন এই ৫ -৬টি গ্রামের বাসিন্দারা বিধায়ককে কাছে পেয়ে তাদের ক্ষোভ উগরে দিলেন। তারা দাবি করেন অবিলম্বে সুদ সমেত বকেয়া টাকা মিটিয়ে নাদিলে তারা আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হবেন।

নিত্যানন্দপুর গ্রামের চাষি ভূতনাথ মন্ডল, অনন্ত বাজপাই বলেন,’আমরা বাম আমল থেকেই রাজ্য সেচ মন্ত্রকে বকেয়া ক্ষতিপূরণ দাবি করে আসছি। কিন্তু আমাদের দাবিকে গ্রাহ্য করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর আমরা বড়জোড়ার প্রথম তৃণমূল বিধায়ক আশুতোষ মুখার্জির কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। সমস্ত কাগজপত্র জমা দিয়েছি। তারপর তিনি হেরে গেলেন। বিধায়ক হলেন সিপিএমের সুজিত চক্রবর্তী। তাকেও সমস্ত কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করেছি। তিনিও কোন ব্যবস্থা করেননি। বর্তমানে তৃণমূলের বিধায়ক হয়েছেন অলক মুখার্জী। তার কাছেও দাবি-দাওয়া জানালাম।’

সারাঙ্গপুর গ্রামের মনোহর মন্ডল বলেন,’জলাধারটি এখন ভরাট হয়ে গেছে। ক্যানেলের মাধ্যমে যে সেচের জল যেত তা বন্ধ হয়ে গেছে। এই জলাধারে ডিভিসির মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ছাইগোলা জল এসে পড়ছে। ডিভিসির নালার দুপাশে কৃষি জমি ছাই পড়ে চাষের অযোগ্য হয়েছে।’  তারা আরও বলেন,’ডিভিসি এর জন্য আমাদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছিল প্রতিবছরই। কিন্তু হঠাৎ করে ৩ বছর ধরে তা বন্ধ করে দিয়েছে।’ নিত্যানন্দপুর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দেবদাস বাজপাই বলেন,’ডিভিসির ছাইয়ে জলাধার ভরে গেছে। ফলে কৃষি ছাড়াও এখানে যে ধীবর সমবায় সমিতি মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন সেই মাছ চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আড়াইশো ধীবর পরিবার জীবিকা হারিয়েছে। জলাধারে যেটুকু অংশে জল থাকে সেই জলের মাছ দূর্গন্ধে খাওয়া যায়না।’

দেবদাস বাজপাইয়ের দাবি ডিভিসিকে জলাধারটি সংস্কার করার জন্য সমস্ত ব্যয় ভার বহন করতে হবে। এইসব দাবি-দাওয়া গুলি তাঁরা বিধায়কের মাধ্যমে জানিয়েছেন। ডিভিসির ডিজিএম প্রবীর চাঁদ বলেন, ‘এখন আমরা উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে জল রিসাইক্লিং করে ব্যবহার করছি। যেটুকু জল বেরিয়ে যায় তাতে ছাই বের হয়না। তাই ক্ষতিপূরণের কোনো দায় ডিভিসির নেই।’ বিধায়ক অলক মুখার্জী বলেন, ‘২০১৯ সালে ডিভিসির তৎকালীন চিফ ইঞ্জিনিয়ার চন্দ্রশেখর ত্রিপাঠীকে নিয়ে বাঁকুড়ার তৎকালীন জেলা শাসক ডা: উমাশঙ্কর এস সরেজমিনে জলাধার পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিলেন। ডিভিসির চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে তিনি জলাধার সংস্কার করতে বলেন। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি হন। কিন্তু এখনও কেন হয়নি সে বিষয়ে শীঘ্রই জেলা প্রশাসন ও ডিভিসির সঙ্গে আলোচনায় বসবো।’ পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘জলাধারের জন্য জমিদাতাদের বকেয়া ২০ % দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য সেচ মন্ত্রকের সাথে কথা বলব। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জেলা অফিসেও যোগাযোগ করে জানবো কোথায় সমস্যা রয়েছে।’ কিন্তু অবস্থা যা তাতে এই কৃষকদের অভাব মিটবে কবে সেটাই এখন দেখার।

বিশেষ প্রতিবেদকঃ মলয় সিংহ, বাঁকুড়া