রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিংহের কাছ থেকে ২০ বিঘা জমি নিয়ে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে রবীন্দ্রনাথ ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর পাঁচজন ছাত্র নিয়ে ব্রহ্মচর্যাশ্রম’নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ধাপে ধাপে এই শান্তিনিকেতনেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠা করেন।
বিশেষ কিছু চিন্তাভাবনা থেকেই শান্তিনিকেতনের শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি। তিনি নিজে কখনো বাধাধরা শিক্ষায় বিশ্বাস করতেন না। স্কুলে যাওয়ার তীব্র অনীহার জন্য ছোট্ট রবির জন্য বাড়িতেই শিক্ষক আনিয়েছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ নিজেও চাইতেন প্রকৃতির কাছাকাছি আদর্শ পরিবেশের মধ্যে শিশুদের বড়ো করে তুলতে হবে। প্রাচীন ভারতের আশ্রমিক শিক্ষার ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তাই তিনি শিক্ষার্থীদের শান্তিনিকেতনে রেখে শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের শিক্ষার্থীদের সৃজনমূলক কাজের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। এখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করারও ব্যবস্থা করেন। তিনি বলতেন, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠা করে তাকে বিশ্বজাতির মিলনভূমিতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বভারতীতে বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি এখানে চিন, জাপান, ইউরোপ, আমেরিকা-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্ডিতদের নিয়ে এসেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় ঘটাতে চেয়েছিলেন। এজন্য শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষের বাইরে প্রকৃতির মধ্যে গাছের তলায় শিক্ষা দেওয়া হত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই শান্তিনিকেতনে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন ভাবনা শুধু বাংলা বা ভারতে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে একদিকচিহ্ন হয়ে আছে। দেশ-বিদেশের বহু ছাত্র ও শিক্ষকরা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।