করোনা সংক্রমণ এবং পরবর্তী সময়ে লক ডাউন সমগ্র বিশ্ব অর্থনীতিতে ধ্বস নামিয়েছে। বিপুল জন সংখ্যার ভারতবর্ষে এই অর্থনৈতিক মন্দা আরও ভয়াবহ। একের পর এক কাজ হারিয়েছে মানুষ। বেসরকারি সংস্থাগুলি কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে। কিন্তু এবার তার প্রভাব পড়ল শিক্ষা ব্যবস্থার উপর। বেশ কিছু বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এই সুযোগে নিজেদের আর্থিক লাভের পরিমাণ বাড়াতে মাঠে নেমে পরেছে। যার মাশুল গুনতে হচ্ছে অশিক্ষক কর্মচারী থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।
ইতিমধ্যেই কলকাতার কয়েকটি স্কুল আবার ফি বাড়িয়েছে। অভিভাবক অভিভাবিকারা আন্দোলনে নেমেছেন। বেশ কিছু স্কুল যদিও ফি বাড়ায়নি, কিন্তু শিক্ষকদের বেতন ৭০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। কোথাও কোথাও অশিক্ষক কর্মচারীদের বেতন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের বক্তব্য,তাঁরা অন লাইনে ক্লাস নিচ্ছেন তবুও তাদের বেতন কেটে নেওয়া হচ্ছে অথচ এই পরিস্থিতিতে যখন স্কুল সম্পূর্ণ বন্ধ, ইলেকট্রিক বিল থেকে শুরু করে দৈনন্দিন খরচ নেই, তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের কাছ থেকে তো সম্পূর্ণ ফি আদায় করছে। এমনকি যেহেতু লক ডাউন মার্চ মাসের একদম শেষে শুরু হয়েছিল আর নতুন শিক্ষাবর্ষ এপ্রিল থেকে তাই এই স্কুলগুলি ততদিনে রিঅ্যাডমিশন বাবদ মোটা অঙ্কের টাকাও নিয়ে নিয়েছিল। প্রতিমাসের সম্পূর্ণ ফি ও ট্রান্সপোর্ট ফি এর অর্ধেক টাকা নিয়েও স্কুল বাসের চালক ও হেল্পারদের সামান্য টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে। একই চিত্র উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাতের বিভিন্ন স্কুলে। সুধীর মেমোরিয়াল, কল্যাণী পাবলিক স্কুল, ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল,নারায়ণা, আদিত্য অ্যাকাডেমী, সব স্কুলেই শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে স্কুলের অন্যান্য কর্মীরা গভীর সঙ্কটের মুখে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন শিক্ষক জানালেন কল্যাণী পাবলিক স্কুলে প্রিন্সিপাল ও কয়েক জনের বেতন একটুও কাটা হয়নি অথচ বাকিদের বেতন কেটে নেওয়া হচ্ছে। নারায়ণা স্কুলে আবার তাদের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ব্রাঞ্চের গুটিকয় শিক্ষককে দিয়ে অনলাইন ক্লাস চালিয়ে বাকিদের ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি গিয়ে ফি কালেকশান, নতুন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি প্রভৃতি নন অ্যাকাডেমিক কাজে যেতে বাধ্য করছে। আর আদিত্য অ্যাকাডেমী কোন কারণ ছাড়াই এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অনেক অশিক্ষক কর্মীকে তাদের কাজ থেকে অব্যহতি নিতে বাধ্য করেছে। লক ডাউনের এই সময়ে তাদের পরিবারগুলি এখন তীব্র আর্থিক সঙ্কটে।
এই রকম বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির শিক্ষক-শিক্ষিকারা এখন আন্দোলনে নামছেন। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে শুরু করে লেবার কমিশনার, ডিএম, সর্বত্র চিঠি পাঠানো হয়েছে। লেবার কমিশনের এক আধিকারিক জানান,’ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে আগে থেকে শোকজ না করে কাউকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা যায় না বা তার বেতন কাটা যায় না। তবে এই পরিস্থিতিতে কেন তাদের চাকরি থেকে সরানো হল বা বেতন কেটে নেওয়া হল তা নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ এই লক ডাউনের মধ্যে চরম হতাশায় দিন কাটাতে হচ্ছে এই শিক্ষকদের। মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে কীভাবে পড়াবেন ছাত্র-ছাত্রীদের তাও বুঝতে পারছেন না তাঁরা।