২০২১ সালের বিধানসভাকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে বিজেপি। তাই তাদের কর্মসূচি আনা হয়েছে, ‘আমার পরিবার বিজেপি পরিবার।’ এই কর্মসূচিতে মিসড কল দিয়ে বিজেপি’র সদস্য হতে হচ্ছে। আর এবার তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা প্রবীণ বিজেপি নেতা তথাগত রায়। তিনি মিসড কল দিয়ে বিজেপি’র সদস্য হতে মোটেই রাজি নন।
এখন প্রশ্ন উঠছে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে দিলীপ–মুকুল দ্বন্দ্বের মাঝে ত্রিকোণ হয়ে উঠবেন রাজ্য বিজেপি’র প্রাক্তন সভাপতি? কারণ রবিবার পাকাপাকি কলকাতায় চলে আসছেন মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল। দু’দিনের মধ্যে সব সামলে বিজেপি’র হয়ে ভোটের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। কিন্তু তার আগে প্রয়োজন বিজেপির সদস্যপদ। পাঁচ বছর আগে রাজ্যপালের চেয়ারে বসার সময় তথাগত পার্টির সদস্যপদ ছেড়েছিলেন। তাহলে উপায়?
যখন বাংলায় বিজেপি ৫ শতাংশের দল তখন বিজেপি’র মুখ বলতে তপন সিকদার, বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রী ও তথাগত রায়। ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত রাজ্য বিজেপি’র সভাপতি ছিলেন তথাগত। নরেন্দ্র মোদী জমানায় ২০১৫ সালে হন ত্রিপুরার রাজ্যপাল। টুইটারে নিয়মিত সক্রিয় থেকেছেন। মোদীর প্রচার থেকে উগ্র হিন্দুত্বের টুইট করে গিয়েছেন তথাগত। শিক্ষাগত যোগ্যতাও ঈর্ষণীয়। মেট্রোর চিফ ইঞ্জিনিয়ার, যাদবপুরের অধ্যাপকও ছিলেন তথাগত রায়। বিজেপিতে নতুন সদস্যপদ পেতে গেলে বা পুনর্নবীকরণ করাতে হলে নির্দিষ্ট একটি নম্বরে মিসড কল দেওয়াই দস্তুর। এখানেই আপত্তি তথাগত রায়ের। তাঁর সাফ কথা, ‘আমি কোনও মিসড কল দেব না। রবিবার কলকাতায় ফিরছি। তার পরে রাজ্য সভাপতির সঙ্গে দেখা করে পার্টিতে যোগ দেব।’
আর বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘মিসড কল তো দিতেই হবে। সদস্যপদের নম্বর তো আমি দেব না। সেটা কম্পিউটারে হয়। তার জন্য মিসড কল দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আমরা সবাই মিসড কল দিয়েছি। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহও দিয়েছেন।’ এখন দেখার কোন পথে জল গড়ায়। অনেকে মনে করছেন, তথাগত ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হলে উঠলে রাজ্য বিজেপিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হবে। মিসড কল সংক্রান্ত বিতর্ক থেকে মনে করা হচ্ছে, বিজেপিতে তথাগত রায়ের দ্বিতীয় ইনিংস বিশেষ মসৃণ নাও হতে পারে।
এদিকে রাজ্য বিজেপিতে দিলীপ বিরোধী শিবিরের একটি অংশ চাইছে তথাগত দলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠুন। কেননা এই অংশটি মুকুলপন্থীদের সঙ্গেও ভিড়তে চাইছে না। ফেসবুকের আলাপচারিতায় সম্প্রতি দিলীপ ঘোষকে নিশানা করেছিলেন তথাগত। বলেছিলেন, গরুর দুধে সোনা, গোমূত্র পান—এসব বাঙালি নেয় না। আমি সক্রিয়ভাবে বিজেপি করব। সুতরাং একটা সরাসরি লড়াই দেখছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। দলের কেন্দ্রীয় নেতা সম্বিত পাত্র কমেন্ট করেছেন, ওয়েলকাম ব্যাক।
বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই রাজ্য বিজেপি’র অন্দরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিজেপি’র অন্দরের খবর, তথাগত রায়ের আবির্ভাব অক্সিজেন জোগাবে রাহুল সিনহা শিবিরে। উল্লেখ্য, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত রাজ্যপাল হওয়ার পর ফিরে এসেছেন সক্রিয় রাজনীতিতে। ফলে তথাগতর রাজনীতিতে ফেরা নজিরবিহীন নয়।