তৃণমূলের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর শতকের সম্পর্কে আজ ছেদ পড়ল। তার আগে তৃণমূল কর্মী–অনুগামীদের উদ্দেশ্য একটি খোলা চিঠি লিখলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। শনিবার তৃণমূলের সঙ্গে দীর্ঘ দু’দশকেরও বেশি সময়ের সম্পর্ক ছিন্ন করে বিজেপিতে যোগ দিলেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম নেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেইসঙ্গে কার্যত বিজেপিতে মেগা যোগদানের সাক্ষী হল মেদিনীপুর।
শুভেন্দু, শীলভদ্রের পাশাপাশি বহু নেতারাই আজ যোগদান করলেন বিজেপিতে। আজ বেলা ঠিক ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ কাঁথির শান্তিকুঞ্জের বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। পরনে পছন্দের সাদা পাজামা–পাঞ্জাবী এবং কালো হাফ জ্যাকেট। এদিন মঞ্চে ওঠার ঠিক আগে তৃণমূলকর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি ৬ পাতার খোলা চিঠি পেশ করেছেন শুভেন্দু। দীর্ঘ এই চিঠির মূল কথা–‘তৃণমূলে পচন ধরেছে। ১০ বছরে কোনও পরিবর্তন হয়নি। দলের থেকে ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। এটা ভীষণ কষ্টদায়ক যে, বাইরে থেকে যাঁদের ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁরাই দল চালাচ্ছেন। তৃণমূল স্তরের রাজনীতি সম্পর্কে যাঁদের কোনও ধারণা নেই। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা অপমানিত হচ্ছেন।’ শুভেন্দু লিখেছেন, ‘২০২১ সালের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ এক সন্ধিক্ষণের সামনে দাঁড়িয়ে। একুশের নির্বাচনে আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব তার প্রভাব আমাদের ওপরে পড়বে। আমার মনে হয়, এবার নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, ‘দশ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। রাজ্যে আমার ভাইবোনদের সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। বলা ভালো অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। কিন্তু সরকারি পরিকাঠামো শুধরে নিয়ে রাজ্যের সমস্যার সামধান করা যেত। কিন্তু তা হয়নি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যে দলটার জন্য কাঁধে কাঁধ দিয়ে লড়াই করেছিলাম তা ভেতরে ভেতরে পচন ধরছে। নতুন জীবন শুরু করতে চলেছি। কিন্তু পুরনো দিনের কথা ভুলব না। সম্মান পেয়েছি, বাংলার মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি।’
শুভেন্দু একা যাচ্ছেন না বিজেপিতে। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন দলের একাধিক বিধায়ক, সাংসদ এবং জেলাস্তরের অনেক পদাধিকারীদের। ফলে বিজেপি একযাত্রায় অনেক ফল আশা করতেই পারে। শনিবার মেদিনীপুরে অমিত শাহের ‘মেগা যোগদানে’ যোগ দিতে চলেছেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল তো বটেই বাম–কংগ্রেস দলেরও একাধিক বিধায়ক। এদিন গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাচ্ছেন মন্তেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক সৈকত পাঁজা, ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত, গাজোলের তৃণমূল বিধায়ক দীপালি বিশ্বাস, হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল, কাঁথি উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক বনশ্রী মাইতি, তমলুকের সিপিআই বিধায়ক অশোক দিন্দা, কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু, নাগরাকাটার তৃণমূল বিধায়ক সুকরা মুণ্ডা, পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল, প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ দশরথ তিরকে প্রমুখ।
এই বিষয়ে দলের সর্বভারতীয় সহ–সভাপতি মুকুল রায় বলেন, ‘শুভেন্দু আসায় দলের শক্তি বাড়ল। মমতা যতই চেঁচান তৃণমূল ১০০ আসন পাবে না।’
এই বিষয়ে তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘ওর বাবা সাংসদ, ভাই সাংসদ, আরেক ভাই পুরপ্রধান। ও আবার পরিবারতন্ত্রের কথা কী বলে? ও কী পেয়ে বিজেপিতে গেল সেটা বরং বলুন।’ অবশ্য চিঠির শেষে শুভেন্দু লিখেছেন,’রাজ্যের মানুষের কথা ভেবে আমি একটা পথ বেছে নিয়েছি। আপনাদেরও নতুন রাস্তা বেছে নিতে হবে। বাংলার মানুষের যে দায়িত্ব তৃণমূলের ওপরে চাপিয়ে দিয়েছিল তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। গুরুদেবের কথা মানি, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে।