পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে বৃহস্পতিবারের ভিডিও শুনানিতে কেন্দ্রকে কড়া নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। একের পর এক প্রশ্নও তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। এদিন সরকারের পক্ষের আইনজীবী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা তুলে ধরেন, এখন পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে। তবে শুনানি শেষে বেশ কয়েকটি বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি অশোক ভূষণ, সঞ্জয়কিষান কৌল এবং এমআর শাহের ডিভিশন বেঞ্চের ভিডিও শুনানিতে কেন্দ্রের তরফে অংশ নেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বেঞ্চের সামনে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের রাজ্যে ফেরাতে কেন্দ্রের নেওয়া যাবতীয় উদ্যোগ এবং সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে বাস বা ট্রেনের ভাড়া নেওয়া যাবে না। রাজ্যগুলিকে রেলের ভাড়ার কিছুটা বহন করতে হবে। বাস বা ট্রেনে ওঠা পর্যন্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের আশ্রয় এবং খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের যথাযথ খাবার, পানীয় জল এবং পরিষেবা সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে। উত্তরে তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত ৯১ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের রাজ্যে ফেরানো হয়েছে। কোনও পরিযায়ী শ্রমিকই ভিন রাজ্যে আটকে থাকবেন না। যতক্ষণ না প্রতিটি শ্রমিক নিজের রাজ্যে ফিরছেন ততক্ষণ এই বিশেষ ট্রেন বন্ধ করা হবে না। তখন সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়, আগামী শুক্রবারের মধ্যে কেন্দ্র এবং রাজ্যকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানোর পরিকল্পনা ঢেলে সাজাতে হবে।
একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ট্রেন যাত্রার সময় সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে খাবার এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে।
ট্রেন এবং বাসে পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবার এবং জলের ব্যবস্থা করতে হবে। এমনকী রাজ্যগুলিকেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করে যত দ্রুত সম্ভব তাদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আদালত সূত্রে খবর, ত্রাণশিবিরগুলিতে পরিযায়ী শ্রমিকরা খাবার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। যাঁরা ভাড়াবাড়িতে রয়েছেন, তাঁরাও লকডাউনের কারণে দুর্দশায় পড়েছেন। মহারাষ্ট্রে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। যে সব শ্রমিক সড়ক পথে হেঁটে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য খাবার এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার জন্য কেন দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে? এই প্রশ্ন তোলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। উল্লেখ্য, শ্রমিকদের ট্রেন ভাড়া কে দেবে– কেন্দ্র না কি রাজ্য? এই দোটানায় পড়েছেন আটকে পড়া শ্রমিকরা। এই সুযোগে তাঁদের বিভ্রান্ত করছে দালালরা। কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির যৌথ উদ্যোগে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর সবরকম প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আদালতে জানায় কেন্দ্র।
কেন্দ্রের দাবি, প্রত্যেকদিন ১৮৭টি ট্রেনে করে ১.৮৫ লক্ষ শ্রমিককে ঘরে ফেরানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ট্রেনে ৫০ লক্ষ শ্রমিক নিজের রাজ্যে ফিরেছেন। গ্রহিতা রাজ্য বা উৎস রাজ্য রেলকে ভাড়া মেটাচ্ছে। পরে তা পরিশোধ করে দিচ্ছে রেল। রেলের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে জল এবং খাবার দেওয়া হচ্ছে। ট্রেনে ওঠার আগে প্রথম খাবার দিচ্ছে রাজ্য সরকার। ট্রেন ছাড়ার পর সব দায়িত্ব রেলের। কম দূরত্বে একবার এবং বেশি দূরত্বে দু’বার খাবার দিচ্ছে রেল। এখনও পর্যন্ত ৮৪ লক্ষ খাবার দেওয়া হয়েছে।