তিলোত্তমা কলকাতায় মেট্রো স্টেশনের উদ্বোধন। সুতরাং স্থানীয় বিধায়ক–সাংসদদের পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল। এটাই সৌজন্য। সেখানে বেনজিরভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করা হল না বলে অভিযোগ। এর আগেও হয়েছিল ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর উদ্বোধন, আর এবার ২৫ বছর পর কলকাতা শহরে আবার পাতাল স্টেশনের উদ্বোধন। কিন্তু দু’ক্ষেত্রেই পিছু ছাড়ল না বিতর্ক। ফুলবাগান মেট্রো স্টেশনের উদ্বোধনে আমন্ত্রণ না পাওয়া নিয়ে ফের একবার উঠল বিতর্ক। দেখা দিল কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাত।
এদিকে ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে ফুলবাগান। এই স্টেশনের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় ফুলবাগানই হতে চলেছে প্রথম ভূগর্ভস্থ স্টেশন। কারণ সেক্টর ফাইভ থেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত লাইন ছিল মাটির উপরে। কিন্তু স্টেডিয়াম থেকেই ট্রেন প্রথম সুড়ঙ্গে প্রবেশ করবে। সেক্টর ফাইভ থেকে ফুলবাগান পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় ১৬ মিনিট। ভাড়া পড়বে ২০ টাকা। এতদিন সেক্টর ফাইভ থেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত যাওয়া যেত ১০ টাকায়।
কিন্তু এতকিছুর মধ্যে ফুলের মধ্যে কাঁটা থেকেই গেল। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি! রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিত্বকে কেন ডাকা হল না? কেন তাঁকে বাইপাস করা হচ্ছে? এর প্রতিবাদেই আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবেন না বলে জানান সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সেক্টর ফাইভ থেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত চার কিলোমিটার দূরত্বে ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর সূচনা করেছিলেন রেলমন্ত্রী। তারপরে গত ১৮ জুন ফুলবাগান স্টেশন এবং সংলগ্ন মেট্রোপথ পরিদর্শন করে তিন মাসের মধ্যে পরিষেবা শুরুর অনুমতি দেন রেলওয়ে সেফটি কমিশনার। সোমবার থেকে সেক্টর ফাইভ থেকে ফুলবাগান পর্যন্ত ছুটবে মেট্রো। মেট্রোকর্তাদের আশা, ফুলবাগান পর্যন্ত পরিষেবা সম্প্রসারিত হলে যাত্রী সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে।
তৃণমূলের আরেক মন্ত্রী সাধন পান্ডে জানান, তিনি অনলাইনে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবেন। যেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন না বলে জানিয়েছেন, সেখানে তাঁরই দলের রাজ্য সরকারের মন্ত্রী সাধন পান্ডে উপস্থিত থাকবেন বলে জানানোয় বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। এই মেট্রোর লাইন পরেশ পাল এবং সাধন পান্ডের বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়ছে।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, কোনও বাধা–বিঘ্ন ছাড়াই ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে পারে, তার জন্য সবরকমভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৯ সালের অগাস্ট মাসে যখন বউবাজার বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটল, তখনও ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী। অথচ আজ তাঁকে বাদ দিয়েই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান! কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কেন্দ্রে রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন কিন্তু প্রতি অনুষ্ঠানে তৎকালীন রাজ্য পরিবহন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীকে আমন্ত্রণ জানানো হত।
উল্লেখ্য, আগেরবার ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর উদ্বোধন নিয়েও একই বিতর্ক হয়েছিল। সেবার মেট্রোর উদ্বোধন করতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। উপস্থিত ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেউ সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাননি।