দেশের জাতীয় সঙ্গীত কী বদলে যাবে? এই প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে। কারণ জাতীয় সঙ্গীতে বদল চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দু’পাতার চিঠি লিখলেন বিজেপি’র সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। আর তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হতে শুরু করেছে। যেহেতু বিষয়টিতে দ্রুত সাড়াও পেলেন তিনি। এই নিয়ে যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত স্বামী নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে লিখেছেনও সে কথা। আর তারপরেই শুরু হয়ে গিয়েছে নতুন বিতর্ক। এখন এটাই জাতীয় রাজনীতিতে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সঙ্ঘের অথবা বিজেপিতে কিছু কিছু আপত্তির কথা শোনা গিয়েছে। তবে ভোটের দিকে তাকিয়েই হোক, বা না হোক, গত দু’বছরে মোদী মাঝে মাঝেই তাঁর নিজের ভাষণে রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করেছেন। এই অবস্থায় সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর টুইট অন্যরকম বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন, জনগণমন নিয়ে সুব্রহ্মণ্যমের আপত্তি কেন? কারণ তাঁর মনে হয়েছে, এই গানে বেশ কিছু শব্দ অপ্রাসঙ্গিক। তা আর রাখার দরকার নেই। জানা গিয়েছে, বিজেপি সাংসদের আপত্তির অন্যতম কারণ ‘সিন্ধু’ শব্দটি। তাঁর মতে, জাতীয় সঙ্গীতের কিছু কিছু শব্দ (যেমন, সিন্ধু) এখন অনাবশ্যক ধোঁয়াশা তৈরি করে। রবীন্দ্রনাথের জনগণমন–র শব্দ বদলে তিনি তাই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (আইএনএ) গাওয়া গানটিকেই পছন্দ করেন। বরং জনগণমন’র আদলে লেখা আইএনএ’র জাতীয় সঙ্গীত ‘কাওয়ামি তারানা’র প্রথম পংক্তি ছিল ‘শুভ সুখ চ্যায়েন’। এই গানটিই ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করেছেন স্বামী। দেশের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হল কৃষক আন্দোলন। সেখান থেকে কি করে বেরিয়ে আসা যায় সে সম্পর্কে কোনও কথা না বলে হঠাৎ জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন নিয়ে সওয়াল করায় হাসছে অনেকে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৪৩ সালে সুভাষচন্দ্র বসুর নির্দেশে আইএনএ–র দুই সদস্য মুমতাজ হোসেন এবং কর্নেল আবিদ হাসান সাফরানি গানটি লিখেছিলেন, সুর দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন রাম সিং ঠাকুর। সিন্ধু শব্দ নিয়ে স্বামীর আপত্তি, আইএনএ–র গানেও তার উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া, সিন্ধু শব্দটি আরএসএসের অখণ্ড ভারত–তত্ত্বকে সমর্থন করে। তবে এত জটিলতায় না ঢুকে স্বামীর আশা, আসন্ন ২৩ জানুয়ারির মধ্যেই এই নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে মোদী সরকার। এখন প্রশ্ন, তাহলে বদলে যাবে দেশের জাতীয় সঙ্গীত? সে উত্তর সময় দেবে।