করোনাভাইরাসের জেরে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যে স্কুল–কলেজ বন্ধ রয়েছে। মাঝে কয়েক মাসের জন্য নবম থেকে দ্বাদশের ক্লাস চললেও বন্ধ হয়ে যায় সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তে। তবে ভার্চুয়াল ক্লাস চলছে। রাজ্যজুড়ে ছাত্রছাত্রীরা গৃহবন্দি। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সীমান্তের স্কুল পড়ুয়াদের টোপ দিচ্ছে পাচারকারীরা। নামানো হচ্ছে চোরাচালানে।
কেউ অনটনের হাত থেকে পরিবারকে বাঁচাতে, কেউ নিছক কৌতূহলের বশে, কেউ আবার মোবাইল বা অন্য সামগ্রী কেনার লোভে চোরাকারবারিদের ফাঁদে পা দিচ্ছে। নানা অছিলায় বাড়ি থেকে বেরচ্ছে তারা। তারপর ওষুধ থেকে শুরু করে, সোনা, রুপো, সাবান, বিস্কুট সহ বিভিন্ন সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে আসছে বাংলাদেশের পাচারকারীদের হাতে। ছাত্রদের পাশাপাশি এই কাজে হাত পাকিয়েছে ছাত্রীরাও। বিএসএফ ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করলেও কোনওভাবেই পাচারে রাশ টানতে পারছে না।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বিএসএফের সক্রিয়তা বাড়লে পাচারকারীদের দাপাদাপি কিছুটা কমে। কয়েকদিন বাদে তা কিছুটা কমলে আবার জেগে ওঠে চোরাপথের কারবার। গত দু’বছর ধরে বিএসএফের অতি সক্রিয়তার কারণে চোরাচালান অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ এসেছে। তবে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সোনার বিস্কুট, রুপোর বাট, মাদক সামগ্রী, ওষুধ, শাড়ি, জামা, জুতো, মুদি সামগ্রী বাংলাদেশে পাঠায় চোরাকারবারিরা। বিএসএফের চোখকে ফাঁকি দিতে প্রায়ই তারা নতুন নতুন ছক খোঁজে।
মহিলা, বৃদ্ধ, কৃষক, গাড়িচালক, মৎস্যজীবীদের পর এবার স্কুল পড়ুয়াদের টার্গেট করেছে তারা। স্কুল বন্ধ থাকায় অবসরে খেলাধুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে কচিকাঁচারা। সেইসব ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বিএসএফের জওয়ানরাও নানা সময়ে গল্প করে। খোঁজখবর নেয় পরিবারের। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকে।
এই পড়ুয়াদের মোটা টাকার টোপ দিয়ে সোনা ও ওষুধ চোরাচালানে যুক্ত করা হচ্ছে। শনিবার বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তের রেল ক্রসিংয়ের কাছে মোটরবাইকে করে দুই যুবককে যেতে দেখে তাদের আটকান বিএসএফ জওয়ানরা। ওই দুই যুবকের নাম বিশ্বজিৎ সরকার ও রমেশ মণ্ডল। তাদের কাছ থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকার ওষুধ বাজেয়াপ্ত করেন ১৭৯ নম্বর ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা। ধৃত রমেশ চায়ের দোকান চালায়। সে ড্রপ আউটের শিকার। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আর স্কুলে যায়নি সে। ধৃতরা জানিয়েছে, সীমান্তে থাকা বাংলাদেশের এক গাড়িচালককে দেওয়ার জন্য এই ওষুধগুলি দিয়েছিল দেবাশিস মণ্ডল নামের এক যুবক। দেবাশিস স্নাতক উত্তীর্ণ।
বিএসএফ সূত্রে খবর, স্বরূপনগর, বসিরহাট–সহ জেলার বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় স্কুল পড়ুয়ারা চোরাকারবারে জড়িয়ে পড়ছে। স্বরূপনগরে সীমান্ত লাগোয়া হাকিমপুর হাইস্কুলে যেতে হয় বিএসএফের চৌকি পেরিয়ে।
চোরাচালান রুখতে স্কুলের সামান্য আগেই মূল রাস্তার উপর গ্রামবাসীদের তল্লাশি করে গ্রামে ঢোকার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এই স্কুলে গত এক বছরে ড্রপ আউট পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়েছে। ৩০ জনের বেশি এবার মাধ্যমিকের ফর্ম ফিল–আপ করেনি। ওই ছাত্ররা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়তে পারে।