রাজ্য লিড নিউজ

এক মৃত্যু অনেক প্রশ্ন

যাদবপুরের প্রথম বর্ষের মেধাবী পড়ুয়া স্বপ্নদীপের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে তোলপাড় গোটা রাজ্য। মাত্র তিন দিন যাদবপুরের মেইন হস্টেলে এসে কেন এই মর্মান্তিক পরিণতি হল স্বপ্নদীপের তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মৃত্যুর দিন ফোন করে মা-বাবাকে স্বপ্নদীপ জানিয়েছিলেন তিনি ভাল নেই। মাকে বলেছিলেন, “আমাকে বাঁচাও।” সেই রাতেই তিনতলার বারান্দার নীচে স্বপ্নদীপের বিবস্ত্র, রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। কেন এই মর্মান্তিক পরিণতি স্বপ্নদীপের সেই উত্তর এখনো অধরা। তবে তিনি যে আত্মহত্যা করেননি তা মেনে নিয়েছেন অনেকেই।

অনেক স্বপ্ন নিয়ে নদিয়ার বগুলা থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিলেন স্বপ্নদীপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দু’দিনের ক্লাস ভালোই লেগেছিল, সেকথা তিনি জানিয়েওছিলেন পরিবারকে। বুধবার রাতে মাকে তিনি ফোনে বলেছিলেন, ‘বড্ড ভয় করছে, তোমরা আমাকে বাড়ি নিয়ে যাও’।  তার কয়েক মুহূর্ত পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই মৃত্যু হয় স্বপ্নদীপের।

র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন স্বপ্নদীপ, এমনই অভিযোগ পরিবারের। স্বপ্নদীপ কুন্ডুর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খুঁজছে পরিবার থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন তদুপরি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। পড়ুয়া মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে ১১ জনের একটি কমিটি গড়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ১১ জনের ওই কমিটিতে রাখা হয়েছে সাত অধ্যাপক, তিন পড়ুয়া এবং এক চিকিৎসককে।

শুক্রবার সকালে রাজভবনে গিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একটি দল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র‍্যাগিং কমিটির প্রতিনিধিরিা এদিন বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে। তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই স্টুডেন্টস ও হস্টেল সুপারকে এক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের  ছাত্রকে আজ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ছাত্র- ছাত্রীরাও আন্দোলনে নেমেছেন। আজ সারাদিন তাঁরা ক্লাস বয়কট করেছে। কিন্তু উল্টোদিকে এই ঘটনাকে নিতান্ত আত্মহত্যা বলে চালাতেও একদল পড়ুয়া পাল্টা আন্দোলন করছে বলে অভিযোগ। যে হস্টেলে এই ঘটনা ঘটেছে সেই মেইন হস্টেল ইউনিভার্সিটির মুল ক্যাম্পাসের বাইরে এবং এটি মুলত নিয়ন্ত্রিত হয় ইঞ্জিয়ারিং ও বিজ্ঞান  বিভাগের একটি অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন ‘কালেকটিভ’ দ্বারা। এরাই এই সংঘটিত বর্বরতা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ। আর সব দেখেশুনেও চোখ বন্ধ করে রাখে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু্ অধ্যাপক-প্রশাসক। এক প্রাক্তন ছাত্র নেতার কথায়,”এই ঘটনা আগেও ঘটেছে, ছাত্র আন্দোলন হয়েছে, দু’দিন পরে সব স্বাভাবিক হয়েছে, নতুন করে র‍্যাগিং ও শুরু হয়েছে।  ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যতদিন আন্তরিকভাবে এই প্রথা বন্ধ করার চেষ্টা না করবেন, এ চলতেই থাকবে।”

যদিও আজ সারাদিন এই প্রশ্নগুলোই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বারবার ঘুরে এল-

১) স্বপ্নদিপ যদি আত্মহত্যাই করল তবে বিবস্ত্র হয়ে কেন?

২) বাড়িতে ফোন করে মাকে কেন বলল,’ আমার ভীষণ ভয় করছে, আমি ভীষণ চাপে আছি  আমাকে নিয়ে যাও।’

৩) স্বপ্নদিপের বাবা যে ওই রাতে ছেলেকে কান্না করে বলতে শুনেছিল,’ আমি বাঁচব না, আমি সব বলে দেব,’ যদি আত্মহত্যাই করবে তবে একথা বলবে কেন আর কী বা বলে দিতে চেয়েছিল?

৪) ওই রাতে প্রথমে পুলিশকে হস্টেলে ঢুকতে দেওয়া হল না কেন?

ফলে এটা যে র‍্যাগিং-এর জন্যই হয়েছে তা পরিষ্কার বলে দাবি অধিকাংশ অধ্যাপকদেরই। এখন দেখার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দোষীদের আড়াল করে না দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দিয়ে এই নোংরা বর্বর প্রথা চিরতরে বন্ধ করে।