শুক্রবার রাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় বাংলার মুখ্যসচিবকে ৩১ মে’র মধ্যে দিল্লিতে রিপোর্ট করতে হবে। কিন্তু মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলির নির্দেশ ঘিরে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের পথে হাঁটতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই খবর পাওয়া যাচ্ছে নবান্ন সূত্রে। তাঁর বদলির বিরোধিতা করে কেন্দ্রকে চিঠি দিতে চলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩১ মে রাজ্যের মুখ্যসচিব হিসাবে তাঁর মেয়াদ ফুরোচ্ছে। সেদিনই দিল্লিতে যেতে হবে তাঁকে। সকাল ১০টার মধ্যে কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রকে (ডিওপিটি) যোগ দিতে বলা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ক্যাবিনেট নিয়োগ কমিটির এই নির্দেশ সেদিনই এল, যেদিন ইয়াস পরিস্থিতির পর্যালোচনায় বাংলায় আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এই নিয়ে এখন রাজ্য–রাজনীতি তোলপাড় হয়ে গিয়েছে। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীই চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি করেছিলেন। তিন মাস তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্র। কিন্তু তার কয়েকদিন পরই আলাপনের বদলির চিঠি এসেছে। কলাইকুন্ডায় বৈঠকের বদলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ক্ষয়ক্ষতির একটি রিপোর্ট তুলে দিয়ে রওনা হয়ে যান বিপর্যস্ত দিঘার পথে। এরপরই যা মোড় নেয় ‘রাজনৈতিক সাইক্লোন’। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহল আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লি পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যসচিবকে এখনই অব্যাহতি দেবে না রাজ্য সরকার। আপত্তির কথা জানিয়ে আজই কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে তৃণমূল নেতা তাপস রায় জানান, বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গিয়ে বাংলার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে বিজেপি। চিরকাল কেউই কোনও পদে থাকেন না। এই দুর্যোগের সময় মুখ্যসচিবের মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো হয়েছিল। শুক্রবার কেন্দ্র সরকারের যে নির্দেশ তা একেবারেই অযৌক্তিক। ওদের বাংলার প্রতি রাগ, ক্ষোভ, প্রতিহিংসা যে রয়েছে এ গুলি তারই বহিঃপ্রকাশ।
এই বিষয়ে লোকসভায় কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘এখন রাজ্যে ভয়ঙ্কর বন্যা, কোভিড পরিস্থিতি এই সময়টা খুব ইমার্জেন্সি পিরিয়ড। এখন মুখ্যসচিব তাঁর দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার দায়িত্বে রয়েছেন, তখন এভাবে উঠিয়ে নেওয়াটা একটু অবাক লাগল। এটার কি সত্যি দরকার ছিল? প্রতিহিংসার মানসিকতা, সব মিলে কিন্তু এটা হচ্ছে। এটা কিন্তু আমাদের কারও জন্যই ভাল হচ্ছে না।’
যদিও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথাগত রায় জানান, একজন মুখ্যসচিব পরে কেন্দ্রের কোনও মন্ত্রকে যাবেন এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর আগে অনেক হয়েছে। তখন তো এত হইচই হয়নি। আইনজীবী তথা সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘আইনের দিক থেকে দেখলে খুব একটা বিশেষত্ব কিছু নেই। একজন আমলাকে এখান থেকে ওখানে পোস্টিং দিতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকে যায়, যিনি মুখ্যসচিবের কাজ করছেন, তাঁকে হঠাৎ করে এভাবে নিয়ে যাওয়ার কারণ কী? বিশেষ করে মুখ্যসচিবের যখন অবসরকালীন সময় এসে গিয়েছে।’
