দেশ লিড নিউজ

রাজ্য রিলিজ দিল না আলাপনকে

দিল্লি–যাত্রা নয়। সোমবার মুখ্যসচিব হিসেবেই নবান্নে যাচ্ছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। যোগ দিচ্ছেন ইয়াস পরবর্তী ত্রাণ, পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বৈঠকে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যসচিবকে ‘রিলিজ’ দেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি রাজ্য সরকারের কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার (পার) দপ্তরের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে আইএএস নিয়ন্ত্রণকারী কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনাল অ্যান্ড ট্রেনিং’কে (ডিওপিটি)।
গত শুক্রবার কলাইকুন্ডায় নরেন্দ্র মোদীর ইয়াস বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিবের বৈঠকে না থাকার পরই সেই রাতে আলাপনের জন্য এই কেন্দ্রীয় নির্দেশ আসে। আর তারপরই গোটা দেশেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। গত শনিবার নবান্নে রীতিমতো রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে করজোড়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি আর্জিও জানান, ‘‌এই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিন।’‌ কিন্তু সেই নির্দেশ এখনও প্রত্যাহার করেনি কেন্দ্র।
রবিবার বিকেলে স্ত্রী তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে নবান্নে যান মুখ্যসচিব। তাতে জল্পনা আরও বাড়ে। যদিও রাজ্য সরকার সূত্রে খবর, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে রিলিজ দিচ্ছে না নবান্ন। যদিও এই বিষয় নিয়ে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানিয়েছেন তাঁর এই নিয়ে কোনও বক্তব্য নেই। ২৮ মে ডিওপিটি’র পক্ষে আন্ডার সেক্রেটারি অংশুমান মিশ্র আলাপনবাবুকে চিঠি পাঠিয়ে আজ, ৩১ মে সকাল ১০টার মধ্যে দিল্লিতে রিপোর্ট করতে বলেছিলেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মতো সেই চিঠির জবাব দিতে হবে আলাপনবাবুকেও। সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার তাঁকে রিলিজ দেয়নি, এই বিষয়টিই সম্ভবত দিল্লিকে জানাবেন তিনি। মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়ার পরেও আনুষ্ঠানিক অবসরের দিন মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে ডেকে নেওয়ার মতো নজিরবিহীন ঘটনায় আমলা মহলে তো বটেই, আলোড়ন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও।
উল্লেখ্য, ডিওপিটি’র তরফে আলাপনবাবুকে পাঠানো চিঠিতে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (ক্যাডার) রুলস, ১৯৫৪’এর ৬(১) বিধির উল্লেখ করা হয়েছে। ওই বিধির ভিত্তিতে ক্যাডার পোস্টের রাজ্য সরকারের যে কোনও আধিকারিককে কেন্দ্র সরকার প্রয়োজনে ডেপুটেশনে কাজে নিতে পারে। কিন্তু ওই ধারায় স্পষ্ট করে আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের সম্মতি লাগবে। ধারার এই অংশটির ভিত্তিতেই নবান্ন রিলিজ দিচ্ছে না আলাপনবাবুকে। যদি দিল্লিতে কাজে যোগ না দেন, তবে কি আলাপনবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে দিল্লি? এই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। আইএএস মহলের বক্তব্য, অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড আপিল) রুলস, ১৯৬৯-এর সাত নম্বর বিধি অনুযায়ী, কেন্দ্র একতরফা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
নবান্ন সূত্রে খবর, আজ কোভিড সংক্রান্ত যে বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানে উপস্থিত থাকবেন আলাপন। দুপুর তিনটের সেই বৈঠকে মুখ্যসচিব হিসেবে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ই উপস্থিত থাকবেন বলে এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে। এমনকী নিজের দফতরের কর্মীদেরও আর পাঁচটা দিনের মতোই আসার কথা জানিয়েছেন আলাপন। যদিও আলাপনকে এভাবে চিঠি পাঠিয়ে কেন্দ্রের ডেকে নেওয়ার বিষয়টিকে স্বাধীন ভারতে নজিরবিহীন বলছেন অনেকে! আবার অনেক প্রাক্তন আমলা সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের এই নির্দেশকেই ‘বেআইনি’ বলে দাবি করছেন।