জেলা

বিজেপিতে যোগদানে রাশ সঙ্ঘের

তৃণমূলের দলবদলু হলেই যে তিনি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট পাবেন, এমন কোনও শর্ত নেই। আগের দলের ‘হেভিওয়েট’ নেতানেত্রী হলেও না। নয়াদিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের আগে এই কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন বিজেপি’‌র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এদিন দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের সঙ্গে বৈঠক বসেছিলেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতারা। সূত্রের খবর, বৈঠকে বাংলায় বিজেপি’‌র ভাবমূর্তি রক্ষা ও কাদের দলে নেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। জানুয়ারি মাসের শেষে অমিত শাহের বাংলার সফরের আগে রাজধানীতে আরও কয়েকজন গেরুয়াশিবিরে যোগ দিতে পারেন। ফ্রেরুয়ারিতে রাজ্যে আসছেন জেপি নাড্ডা।
বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু হওয়ার পথে। আর ভোটের গন্ধ পাওয়া মাত্র তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বহু নেতানেত্রী বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতেই অমিত শাহের বাসভবনে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বৈঠক। এবারের ভোটে বাংলা জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারী–সহ তৃণমূল অনেকেই ইতিমধ্যেই নাম লিখিয়েছেন গেরুয়া–শিবিরে। বেসুরোদের বাড়বাড়ন্তে অস্বস্তিতে বাড়ছে শাসকদলের অন্দরে। কিন্তু দলের আসতে চাইলেই কি স্বাগত জানানো হবে? দিল্লি বিজেপি বঙ্গ নেতৃত্বের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বৈঠকে আলোচনা হয়। সূত্রের খবর তেমনই।
দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘যাঁরা জিততে পারবেন এবং পার্টির কাজ করবেন, তাঁদেরই টিকিট দেওয়া হবে। আর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবে দিল্লিই। বিজেপি’‌র নিজেরই ওয়েট আছে। কে অন্য দলের হেভিওয়েট, তা আমাদের দেখার বিষয় নয়।’ অমিত শাহকে সম্ভাব্য যোগদানকারীদের একটি তালিকা পেশ করেছে বঙ্গ শিবির। তাঁদের সম্পর্কে খোঁজখবর করবে কেন্দ্রীয় পার্টি। তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে, কাকে দলে নেওয়া হবে, কে বাদ যাবেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, সবাইকে দলে নেওয়া যাবে না। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি থাকতে হবে। দলবদলের হিড়িক এই মুহূর্তে রাজ্য–রাজনীতির সবচেয়ে চর্চিত বিষয়বস্তু। বিজেপি’‌র শীর্ষ নেতৃত্ব নিজেরাই দাবি করছেন, বিধানসভা ভোটের মুখে রাজ্যের শাসকদলের আরও অনেক নেতানেত্রী গেরুয়া শিবিরে যোগ দিতে ইচ্ছুক। এই পরিস্থিতিতে এদিন সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ইস্যুতে দিলীপবাবুর এহেন মন্তব্য নতুন মাত্রা যোগ করছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, কিছুদিন আগে নাগপুরে একটি বৈঠক হয় আরএসএসের। সেই বৈঠক থেকে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বার্তা দেন, আদর্শের বাইরে গিয়ে যে কাউকে দলে নেওয়া যাবে না। এদিন দিল্লিতে যখন বঙ্গ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিজেপি’‌র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, তখন দলবদলুদের প্রসঙ্গে কথা হয়। আলোচনায় উঠে আসে, অন্য দল থেকে অনেক দুর্নীতিগ্রস্থ নেতাও যোগ দিয়েছেন বা যোগ দিতে চাইছে। তাতে দলে সাংগঠনিক শক্তি বাড়লেও ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তারপরই সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভোটের জেতার ক্ষমতার নিরিখে শুধুমাত্র যোগ্য নেতাদের বিধানসভা ভোটে টিকিট দেওয়া হবে।
দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে এদিনের গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠকে ভোটের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। যদিও বৈঠকের পর দিলীপবাবু বলেছেন, ৩০ জানুয়ারি রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ। আর আগামী ২৩ জানুয়ারি সরকারি কর্মসূচিতে নরেন্দ্র মোদীর সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেই সরকারি কর্মসূচির পর বঙ্গ–বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠক করবেন কি না, নিশ্চিত নয়। জানা যাচ্ছে, দিল্লির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এবার বাংলাতে বড়মাপের মিছিল বা মিটিং করবে বিজেপি। গোটা বিষয়টি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন দলের রাজ্য নেতারাই। তবে সেই কর্মসূচিতে যোগ দেবেন অমিত শাহ, জেপি নাড্ডার মতো নেতারাই।
দিলীপবাবুকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল থেকে এমন অনেকে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে অতীতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কিছু ক্ষেত্রে সঙ্ঘও আপত্তি জানিয়েছে বলে সূত্রের খবর। বিজেপি এই ব্যাপারে কী অবস্থান নিতে চলেছে? জবাবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে দিলীপবাবুর জবাব, ‘এক্ষেত্রে দলকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।’