দেশে বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। সরকারি গুদামে মজুত বেড়েছে। কিন্তু দেশে বাজারের চিত্র তার উল্টো। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই রাজধানীর বাজারে মোটা চালের দাম আবার কেজিতে ৫০ টাকা ছুঁয়েছে। গত বছরের এই সময়ের চেয়ে দর ১৩ শতাংশ বেশি হয়েছে।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মধ্যে বাংলাদেশেই এখন চালের দাম সর্বোচ্চ। শুধু মোটা চাল নয়, মাঝারি ও সরু চালের দামও কমেনি। ঢাকার খুচরা দোকানে মাঝারি বিআর-২৮ ও সমজাতীয় চাল মানভেদে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের চেয়ে ১০ শতাংশের মতো বেশি। আর সরু মিনিকেট চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা ও নাজিরশাইল চাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয় বাজারে। গত বছরের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি।
চাল, চিনি, ভোজ্য তেল–সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামেও স্বস্তি না থাকায় মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ সংকটে পড়েছে। কৃষিসচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ এম এম শওকত আলি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে দেশের দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়েছে। চলমান বিধিনিষেধে নতুন করে বহু মানুষের আয় কমেছে। অনেকের আয়ের পথও বন্ধ। এখন চালের চড়া দাম তাদের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে।’
উল্লেখ্য, দেশে বোরো, আমন ও আউশ মৌসুমে বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়। গত বছর বোরোতে উৎপাদিত হয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৯৬ লাখ টন চাল। এই বছর বোরোতে উৎপাদন ২ কোটি টনের বেশি হয়েছে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। সর্বশেষ হিসাবে খাদ্য অধিদপ্তরের গুদামে চালের মজুত দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৬৬ হাজার টনে, যা দেড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
চালের দাম বাড়ছে কেন জানতে চাইলে দেশের বড় চালকলগুলোর একটি মজুমদার অটো রাইস মিলের মালিক চিত্ত মজুমদার জানান, ধান উৎপাদন করতে যা ব্যয় হয়েছে, তাতে চালের দাম এতটা বেশি হওয়ার কথা নয়। বাজারে অনেক নতুন ফড়ে ব্যবসায়ী যুক্ত হয়ে ধান মজুত করছেন। তাঁরা ধান ও চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সরকারের উচিত দ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া।
দেশে চাল আমদানিতে কর মোট ৬২ শতাংশ। চলতি বছরের শুরুর দিকে বেসরকারি খাতে চাল আমদানির সুযোগ দিতে অনুমোদন সাপেক্ষে কর কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছিল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর ছাড়ের মেয়াদ গত ৩০ এপ্রিল শেষ হয়ে গিয়েছে।