জেলা

রান্না করা খিচুড়ির দিকে তাকিয়ে ওরা!‌

সাগর আজ একাকী। কারণ সে আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বারবার তার ওপর আঘাত নেমে এসেছে। মানুষ নয়। আঘাত করেছে প্রকৃতি। আয়লার পর থেকে সাগরদ্বীপের বেহাল নদী ও সমুদ্র বাঁধ মেরামত হলেও ছ’মাস আগে সেগুলি নাড়িয়ে করে দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। এবার আচমকা আমফানের তাণ্ডব গোটা দ্বীপটিকেই কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। আর তার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কপিলমুনির মন্দির।
লট নম্বর আট জেটিঘাট থেকে মুড়িগঙ্গা নদী পার করে কচুবেড়িয়া পৌঁছনোর পথে ভুটভুটিতে তেমন লোকজন দেখা গেল না। তবে ভেসেল পরিষেবা বন্ধ থাকায় বেশি ভাড়া দিয়ে ভুটভুটিতে যেতে হচ্ছে অনেককে। সাগরদ্বীপের স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেল, আমফানের সতর্কবার্তা পাওয়ার পরেই দ্বীপ ছেড়ে কাকদ্বীপে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন অনেকে। আর তারপর বাড়ি ফিরেছেন একরাশ উৎকন্ঠা নিয়ে। চারিদিকে হাহাকার। নেই, নেই আর নেই। কিছুই নেই।
নদীর পাড়ে বামদিকের ইটের রাস্তা ধরে কিছুটা এগোতেই কচুবেড়িয়া গ্রাম। পথে একের পর এক গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, কাঁচাবাড়ি, টিন–অ্যাসবেস্টসের ছাউনি, পানের বোরজ ভেঙে পড়েছে। জলে ভেসে গিয়েছে চাষের জমি ও পুকুর। মাছ, গাছের ডাল এবং পাতা পচে দুর্গন্ধ বেরতে শুরু করছে। এখনও হাঁটু জল। জমা জল সরলেই জলমগ্ন কাঁচা বাড়িগুলি ভেঙে পড়বে। সাপখালি, শীলপাড়া, শিকারপুর গ্রামেও বিপর্যয়ের একই ছবি।
সুমতিনগরে ঢুকতেই নন্দেরবাজারে জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল কয়েকশো পুরুষ ও মহিলাকে। দুপুরে সেখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খিচুড়ি বিলি করার কথা। তাই খিদে চেপে টিফিনবক্স, ছোট ছোট হাঁড়ি, গামলা হাতে নিয়ে প্রতীক্ষা করছেন অনেকে। কিছু স্বেচ্ছাসেবক যুবক মোটরভ্যানে করে ড্রাম ভর্তি জল আনতেই তাঁদেরকে ঘিরে ধরে খাবার ও ত্রাণসামগ্রী না পাওয়ার ক্ষোভ দেখালেন গ্রামের মহিলারা।
সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘ত্রিপল এবং শুকনো খাবার প্রত্যেক ব্লকে পাঠানো হয়েছে। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌছে দেওয়ার কাজ চলছে। যাঁরা পাননি, শীঘ্রই তাঁরা পেয়ে যাবেন। আর সাইক্লোন সেন্টারগুলি থেকে রান্না খাবার বণ্টন করা হচ্ছে।’