রেশন নিয়ে রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। অতি খারাপ মানের চাল, পরিমাণে কম, এরকম নানা বিষয় নিয়ে সারাদিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভের আগুণ জ্বলল। পরিস্থিতি সামাল দিতে ফুড কমিশনারকে তলব করলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। ইতিমধ্যেই ১৯ জন রেশন ডিলারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছে ২৭৫ জন রেশন ডিলারকে।যে যে জায়গায় গণ্ডগোল হবে সেখানে রেশন দেওয়া বন্ধ থাকবে বলেও জানানও হয়েছে।
এদিন সকালে মুর্শিদাবাদের সালার থানার পুনাশি গ্রামে অভিযোগ উঠেছে ডিলারের বিরুদ্ধে। এখানে যে পরিমাণ রেশন পাওয়ার কথা ছিল গ্রামবাসীরা সেই পরিমাণ রেশন পাচ্ছেন না। অভিযোগ করেও ফল পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাই শনিবার সকালে বিক্ষোভে শামিল হন তাঁরা। বরাদ্দ রেশন মিলছে না বলে গ্রাহকদের বিক্ষোভ গণরোষে পরিণত হল। ডিলারের বাড়ি লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় ইট। বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে। বাড়ির সামনে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে। সেখানে বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন বিডিও। একই ভাবে লালগোলায় বিক্ষোভ দেখান গ্রাহকরা। গ্রাহক বিক্ষোভে বিপাকে পড়ে ওই ডিলার এবং তার দলবল নিয়ে গ্রাহকদের মারধর করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাতে আহত হয়েছেন চারজন। গ্রাহকদের অভিযোগ, ভাল চালের সঙ্গে খারাপ–পোকা ধরা চাল মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। তাই শনিবার রেশন দোকান ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় এলাকার বাসিন্দারা।
এদিন নদিয়া, দেগঙ্গা থেকে শুরু করে জেলার নানা জায়গা থেকে রেশন দুর্নীতির অভিযোগ আসে। এদিকে খোদ খাদ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র হাবড়ায় নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু রেশন ডিলারও রেশন দেওয়া নিয়ে অভিযোগ করেন। তাঁদের দাবি, ‘বিভিন্ন ওয়ার্ডের তৃণমূলের কমিশনার থেকে শুরু করে এলাকার নেতারা তিন চার বস্তা করে চাল নিয়ে গিয়ে নিজেদের এলাকায় পার্টির তরফ থেকে দেওয়া হচ্ছে বলে বিলি করছেন, আর রেশনে কম দিলে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে।’
এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মদতের অভিযোগ তুললেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর অভিযোগ, ‘রেশন নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছে বিজেপি–কংগ্রেস। তথ্য না জেনে বিজেপি নেতারা ভুল বকছেন।’ একইসঙ্গে গরিবের খাবার নিয়ে এই ঘৃণ্য রাজনীতি বন্ধ করার ডাক দিয়েছেন তিনি। এদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন,’এমন অযোগ্য খাদ্যমন্ত্রী আগে দেখিনি। ওর বিরুদ্ধে সবাই অভিযোগ করবে। কী করে করুক। ওকে আদালতে টেনে নিয়ে যাব। মানুষ খাবার না পেলে বিরোধীরা কি চুপ করে বসে থাকবে নাকি?’ একদিকে রেশন নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অভিযোগ আর তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপান উতর, মাঝখানে পরে সাধারণ মানুষের কী হাল হয় সেটাই এখন দেখার।