বেশ কিছুদিন ধরেই বেসুরো ছিলেন বনমন্ত্রী। শুক্রবার মন্ত্রী পদে ইস্তফা দিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারীর পর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। দলবদলের জল্পনার মধ্যেই রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ বনমন্ত্রীর। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় গোটা রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। কারণ রাজ্য–রাজনীতিতে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মুখ বলে পরিচিত।
এদিন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার কথা জানান রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, বেশ কয়েকদিন ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের এই মন্ত্রী বেসুরো ছিলেন। সম্প্রতি ফেসবুক লাইভেও দলের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। মন্ত্রী পদে ইস্তফার পর তাঁর বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনা আরও জোরালো হল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
সূত্রের খবর, আগামী ৩০ অথবা ৩১ জানুয়ারি অমিত শাহের উপস্থিতিতে বিজেপিতে যোগ দেবেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনের মুখে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলেছে। পাশাপাশি শহরে মোদী আসার ঠিক আগের দিনেই এই একটা ঘটনা রাজনৈতিক মহলে একাধিক জল্পনার রসদ জুগিয়েছে। তৃণমূলের অভ্যন্তরে যে তাঁর কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে, তাও জনসমক্ষে বলতে শোনা গিয়েছে রাজ্যের বনমন্ত্রীকে। একাধিক মন্ত্রিসভার বৈঠকেও গরহাজির থেকেছেন তিনি। বনমন্ত্রীর মানভঞ্জনের জন্য স্বয়ং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে দায়িত্ব দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। আসরে নেমেছিলেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। দলের তরফে তাঁর মানভঞ্জনের চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু সেসব কার্যত কোনও কাজেই এল না। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন রাজীব। এরপর তিনি সশরীরে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি সকালে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক ছিল তাঁর। কিন্তু সেই বৈঠক এড়িয়ে যান রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর বিকেলেও এলেন না ক্যাবিনেট বৈঠকে। সকালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক এড়াতেই পরের বিকেলের ক্যাবিনেট বৈঠকে তাঁর যোগ দেওয়া নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ওঠে। শেষমেশ ক্যাবিনেট বৈঠকে অনুপস্থিতই রইলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ এবং বিধায়ক পদ ছাড়েননি রাজীব। কিন্তু দু’দিন আগে শুভেন্দু অধিকারীর ফোন এসেছিল রাজীবের কাছে। তারপরই এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
এই নিয়ে গত মাসখানেকের মধ্যে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে এই নিয়ে তৃতীয় হেভিওয়েট মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। গতমাসের মাঝামাঝি পদত্যাগ করেছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। এমাসেই পদত্যাগ করেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা। সেই তালিকায় নাম লেখালেন রাজীবও। ফেসবুক লাইভের শেষাংশে রাজীবের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘২০২১ আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা আমার উপর ভরসা রাখুন। আপনাদের বিশ্বাসভঙ্গ করব না।’
রাজীবের ইস্তফায় দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘বিজেপির দরজা বহুদিন ধরেই খুলে রেখেছি। তাঁকে স্বাগতও জানানো হয়েছে। বিজেপিতে এলে বিজেপির লাভ হবে।’ জয়প্রকাশ মজুমদার জানান, ‘এটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তৃণমূলের অভ্যন্তরীন বিষয়। পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ করেন সেটার দিকেই আমরা এবং মানুষ তাকিয়ে।’ তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘আমরা জানি, শুনেছি। ক্ষোভ থাকতেই পারে। ক্ষোভ মানেই দল ছাড়া নয়। মানুষ বিচার করবেন। জোমজুড়ে তৃণমূল জিতবেই। লিখে নিন।’ বৈশালী ডালমিয়া জানালেন, ‘দারুণ কাজ করেছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা দলের জন্য বড় ক্ষতি। রাজীব দাকে ঝামেলায় ফেলার চেষ্টা হয়েছে বহুবার। কিন্তু পারেনি। হাওড়া জেলার বিশাল ক্ষতি হল।’