ব্রেকিং নিউজ শিল্প-সাহিত্যের খবর

ছেলেবেলায় রবি: এক অনন্য সম্ভবনার ইঙ্গিত

রবীন্দ্রনাথের ছোটোবেলা তাঁর জীবনের অনন্য অধ্যায়। সে যুগে যাঁরা যুগের থেকে এগিয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁদের থেকেও বেশি এগিয়েছিলেন। এগিয়েছিলেন ব্যক্তিত্ববোধ, ধর্মবোধ, সমাজবোধ এমনকি রাষ্ট্রবোধেও।

রবীন্দ্রনাথের জীবনধারা পরিবর্তন করতে পারে অস্থির সময়ের দিকভ্রান্ত মানুষদের। রবীন্দ্রনাথ শিশু বয়স থেকে চাকরদের মহলে কাটালেও সেখানে ছিল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কঠিন নিয়ম। বাড়িময় একা ঘুরে বেড়ানো ছোট্ট রবি নিস্তব্ধ দুপুরে বাড়ির কার্নিশে অথবা গোলাবাড়িতে গিয়ে রোমাঞ্চকর রহস্যময় অনুভূতির স্বাদ নিতেন, বিদেশি চাকরদের কাছে তাদের অঞ্চলের গল্পও শুনতেন।

পাশাপাশি সমান্তরালে ছিল নিয়মের রীতি। স্কুলজীবন শুরুর আগে সকালে গুরুমহাশয়ের কাছে পড়া চলত। বাগানে ঘোরা, তেতলার স্নানের ঘরে ইচ্ছে মতো জলের কল ছেড়ে স্নান করা কোনোটাতেই বাধা ছিল না। সন্ধ্যায় সকলের সাথে রামায়ণ-মহাভারত শুনতেন, আর রাতে ঘুমানোর সময় রূপকথার গল্প।

স্কুল শুরুর সঙ্গে শুরু হল অন্য নিয়ম। অন্ধকার থাকতেই বিছানা ছেড়ে উঠতে হত ‘কুস্তি লড়া’র জন্য। তারপর শিখতেন মানুষের হাড় চেনার বিদ্যা। সকাল সাতটায় শুরু হত নীলকমল মাস্টারের কাছে গণিত, সাহিত্য, প্রকৃতবিজ্ঞান পড়া। এ সবই পড়তেন বাংলাভাষায়।

বিকেলে জিমনাস্টিকের মাস্টারের কাছে ঘণ্টাখানেক চলত শারীরিক কসরত। মাঝখানের কিছু সময় স্কুলে থাকতেন।অবশ্য স্কুলে তিনি কমই যেতেন। তবে বাড়ির বিদ্যায় ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। জিমনাস্টিকের পর ছবি আঁকা। সন্ধ্যা নামলে অঘোর মাস্টারের কাছে ইংরেজি শেখা। ছুটির দিনে গান শিখতেন।

রবীন্দ্রনাথের মানসগঠনে জন্য সবচেয়ে অনুকূল ছিল বাড়ির পরিবেশ। বাড়িতে বাঙালি ঐতিহ্য চললেও চালচলন ছিল বিলেতি। সহবত-আচার-আচরণ ইংরেজদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়, আত্মিক দিক থেকে পুরোপুরি ভারতীয়। শিশু রবীন্দ্রনাথ আপন মনে কল্পনার রঙে ছবি আঁকতেন- ঢুকে যেতেন কল্পনার জগতে।

দেবেন্দ্রনাথ বাড়ির সকলকে নিয়ে উপাসনায় বসতেন। একজন পরিপূর্ণ মানুষ তৈরির সূচনা হয়েছিল এভাবেই। মাত্র ১১ বছর বয়সে পিতার সাথে হিমালয়ে বাস কালে তিনি উপনিষদও শিখে নেন ভালো ভাবে। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে সে সময় শিশু রবীন্দ্রনাথকে শিক্ষা দিতেন। শিক্ষাজীবনের এই ধারায় কোনোটিই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়। রবীন্দ্রনাথের আকাশ এবং প্রকৃতি হয়তো নতুন প্রজন্মকে দেওয়া সম্ভব নয়, তবে বাঙালি ঐতিহ্য এবং আনন্দময় জীবন দেওয়া খুব কষ্টসাধ্য নয়।