তাঁর ক্ষোভ ছিল শেষদিন পর্যন্ত। ক্ষোভ ছিল যোগ্য হয়েও দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে দল না করা নিয়ে। ক্ষোভ ছিল দল তাঁকে রাজনৈতিক সন্ন্যাসের পথ দেখিয়ে দিয়েছিল দল। মুখ বুজে সেদিন মেনে নিতে হয়েছিল। এভাবেও যদি দেশের সেবা করা যায়। হ্যাঁ, তিনি বাংলার সন্তান প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি ভবন ছাড়ার সময় প্রণব মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তিনি বই লিখবেন। বই লিখে নিজের অবসর জীবন কাটানোর ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন। মৃত্যুর আগেই বই লেখার কাজ শেষ করে গিয়েছিলেন। কিন্তু তা প্রকাশ পায়নি। মৃত্যুর চার মাস পরে প্রকাশিত হতে চলেছে তাঁর লেখা শেষ বই ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ারস’।
তবে বই আকারে প্রকাশ হওয়ার আগেই প্রণবের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের কিছু অংশ সামনে এসেছে। যেখানে ছত্রে ছত্রে রয়েছে দলের প্রতি তাঁর ক্ষোভ। আর সেখানেই স্পষ্ট করে তিনি লিখেছেন, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের এই দশার জন্য দায়ী ছিলেন দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। এখন এই নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। কারণ কংগ্রেস ইতিমধ্যেই উত্তরসূরি খুঁজতে গিয়ে পূর্বসূরীকেই ফিরিয়ে এনেছে কংগ্রেস সভাপতির পদে। তা নিয়ে দলের অন্দরেই অনেকে বেঁফাস মুখ খুলেছেন। কেউ কেউ সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রকাশ্যেই মুখ খুলে দলের কোপে পড়েছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির লেখার সঙ্গে দলের অনেকের চিন্তাধারার মিল রয়েছে। শুধু কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব তা উপলব্ধি করতে পারছেন না।
জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের শুরুতেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হবে। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে ইউপিএ জোটের পর যে জয়ের মুখ দেখেছিল তা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেছেন তিনি। বই থেকে পাওয়া যে তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে সেখানে রয়েছে, ‘কংগ্রেসের অনেকেই মনে করেন, ২০০৪ সালে জয়ের পরে আমি প্রধানমন্ত্রী হলে ২০১৪ সালে কংগ্রেসের ভরাডুবি হত না। কিন্তু এই ধারণার সঙ্গে আমি একমত হতে পারি না। তবে আমি মনে করি ২০১২ সালে আমি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে কংগ্রেসের রাজনৈতিক লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল। সোনিয়া দলের বিষয়গুলি পরিচালনা করতে পারছিলেন না। সংসদে মনমোহনের দীর্ঘ অনুপস্থিতির ফলে সাংসদদের সঙ্গে যোগাযোগ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল’।
এমনকী সাংসদে মনমোহনের প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর তুলনা করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপরেই সরকারের নৈতিক কর্তৃত্ব, জাতির অবস্থা এবং প্রশাসনের কার্যকারিতা নির্ভরশীল। সেখানে মনমোহন ব্যস্ত ছিলেন জোট রক্ষায়। প্রশাসনে তার প্রভাব পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদে মোদী অনেকটাই স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলেছেন। ফলে আইনসভা এবং বিচারবিভাগের সঙ্গে তিক্ততা তৈরি হয়েছে’। এখানে তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন কংগ্রেসের দিশা সঠিক ছিল না। তবে এখানেই শেষ নয়, প্রণব মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় মনে আঘাত পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আন্তরিকতা সেই দুঃখ ঘুচিয়ে দিয়েছিল।