দেশ লিড নিউজ

অবসর সংসদের একমাত্র পোস্টম্যানের

তখন ব্যস্ততায় ভরপুর ডাকবিভাগ। একুশ বছর আগের সেই সপ্তাহের প্রথম দিনের সঙ্গে আজকের ‘সোমবার’কে মেলাতে পারছেন না রামশরণ ভার্মা! কারণ ডাক মানেই যে চিঠির পাহাড়। সবেতেই ঠিকানা লেখা সংসদ ভবন। কেউ চিঠি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। কোনও চিঠিতে আবার মন্ত্রী কিংবা সাংসদের নাম। পাঁচ বছর অন্তর ‘নেম প্লেট’ বদলেছে প্রায় সবারই। বদলে যাননি শুধু রামশরণ। পিঠে থেকে গিয়েছে তাঁর ‘গোটা দেশের’ ভার! তিনি হেঁটে চলেছেন কখনও সংসদ ভবনের করিডরে।

টোকা মেরে ঢুকছেন এ ঘর থেকে ও ঘর। পৌঁছে দিচ্ছেন জরুরি চিঠি। পান থেকে চুন খসলেই বিপত্তি! সতর্কতার সঙ্গে সব সামলে সোমবারের বিশাল বোঝা হালকা করা। শেষ হতে না হতেই মঙ্গলবারের ডাক। তাহলেও প্রতিটি দিন ছিল রামশরণের কাছে আগের দিনের পুনরাবৃত্তি! তবুও তিনি বড্ড ভালোবেসে ফেলেছিলেন ‘সোমবার’কে। আর সেই সোমবারই তাঁকে বিদায় জানাল সসম্মানে। আর সংসদ ভবনে দেখা যাবে না রানার রামশরণকে। তাঁর কাজের শেষদিন। একুশ বছরের স্মৃতি খুঁড়তে খুঁড়তে সংসদ ভবনের শেষ ডাকটাও পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।

কাজের ফাঁকে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন শরণ। এখানেই কাটত তাঁর রোজের একটু অবসর। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কীভাবে কেটে গেল এতগুলো বছর! কর্মজীবনে একুশটা বছর কম কিছু নয়। তার উপর এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজ করেছি। আজ শেষদিন। খুব কষ্ট হচ্ছে।

তবুও আমার সান্ত্বনা একটাই—কাউকে কোনওদিন হতাশ করিনি। আমার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগও কেউ তুলতে পারেননি। কেউ বলতে পারেননি, সময়ে চিঠি পৌঁছয়নি তাঁর কাছে।’ ফরিদাবাদের বাড়ি থেকে সাইকেলে চেপে আসতেন গোল ডাকখানায়। সেখানে তিনটি ব্যাগে ভর্তি থাকত সংসদ ভবনের চিঠি। প্রতিটি ব্যাগের ওজন ৫০ কেজি। সেগুলি সাইকেলে চাপিয়ে রওনা দিতেন সংসদ ভবনের লাইব্রেরিতে। শরণের কথায়, ‘এখন ই-যুগে সেই ব্যস্ততা আর নেই। মেইল হয়েছে ই-মেইল। সোমবারের ব্যাগের ওজন কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ কেজিতে।’

চাকরি জীবন শুরু করেছিলেন রেলওয়ে মেইল সার্ভিসে। তারপর লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে ‘পোস্টম্যান’ পদে যোগ। ২০০০ সালে বুক ফুলিয়ে সংসদ ভবনের দায়িত্ব নেন। স্কুল জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ‘ভার্মা’ পদবিতে রামশরণকে চিনতেন সবাই। পরে পদবি ছাড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন। পারেননি। এখন তাঁকে সবাই চেনেন রামশরণ পোস্টম্যান নামে। এই পরিচয়েই গর্বিত সংসদ ভবনের অবসরপ্রাপ্ত রানার। কাজের শেষদিনেও মাথা উঁচু। বিদায় গণতন্ত্রের পীঠস্থান।