করোনাভাইরাস যখন সারা বিশ্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয় থেকে সরে এসে গোটা দেশে রাজনীতি শুরু করে দেওয়া হল। সেখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে শুরু পশ্চিমবঙ্গ, কেরল রাজ্য যেমন জড়িয়ে পড়ছে তেমনি জড়িয়ে পড়ছেন রাজ্যপালও। কেউ বাকি নেই এই রাজনীতি থেকে ফায়দা তুলতে। তা এখন কী এই পরিস্থিতি? মানুষের মনে উঠছে প্রশ্ন। কারণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল–সহ অন্যান্য হাসপাতালের চিকিৎসক–স্বাস্থ্যকর্মীরা এবার করোনার শিকার হতে শুরু করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে লকডাউনের বিধি মানা হচ্ছে না এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সোমবার রাজ্যে এসেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে প্রতিবাদ করেছেন। বলেছেন, এভাবে রাজ্যের সরকারকে অন্ধকারে রেখে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রাজ্যে আসতে পারে না। যে তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুল। এই পরিদর্শন যুক্তরাষ্ট্রীয় রীতি নীতি লঙ্ঘন করছে। মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন, ‘বেলা ১টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করে প্রতিনিধি দল আসার কথা বলেন। সেই ফোনের অনেক আগে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে রাজ্যে এসে পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।’
বাস্তব পরিস্থিতি হল—গোটা হুগলি জেলাকেই কনটেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। হুগলির জেলাশাসকের দপ্তর থেকে জারি হওয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, উত্তরপাড়া–কোতরং পুর এলাকা, ডানকুনি পুর এলাকা, শ্রীরামপুর পুর এলাকা, রিষড়া পুর এলাকা, কোন্নগর পুর এলাকা, বৈদ্যবাটি পুর এলাকা, চাঁপদানি পুর এলাকা, চন্দননগর পুর এলাকাকে কনটেইনমেন্ট জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল এরাজ্যে আসায় চাপে এমন পদক্ষেপ কিনা জানা যায়নি।
আবার রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দুটি কেন্দ্রীয় দল এই রাজ্যে এসেছে, তাঁদের মধ্যে কলকাতার দলটিকে সোমবার নবান্নে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। তার আগেই রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব। তারপর মঙ্গলবারও কলকাতার সেই দলটিকে কার্যত গৃহবন্দি হয়েই থাকতে হয়েছে। দুপুরে তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন মুখ্যসচিব। কেন্দ্রীয় দলটির নেতৃত্বে থাকা অপূর্ব চন্দ অভিযোগ করেন, ‘অন্যান্য রাজ্যেও যাচ্ছে কেন্দ্রীয় দল। তাঁদের থেকে আমরা সহযোগিতাও পাচ্ছি। কিন্তু এখানে সেই সহযোগিতা পাচ্ছি না।’
এই জটিল পরিস্থিতিতে যখন রাজ্যপালের থামানো উচিত তখন তিনি রাজ্যের পর্যবেক্ষণে আসা দুটি কেন্দ্রীয় দলকে সহযোগিতা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিচ্ছেন। ফলে গোটা পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে। টুইট করে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে সহযোগিতা করতে বলছেন। আবার কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করছেন। এরই মধ্যে রেশন থেকে রাজ্যের গরীব মানুষদের খাদ্যশস্য দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সেখানে দেখা দিয়েছে চরম দুর্নীতি। তা নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি।
আর তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘কেন্দ্রের দলের বাংলায় আসার প্রয়োজন নেই। করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যথেষ্ট। এই ধরনের দল পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আঘাত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মনে হচ্ছে এরা জাহাজ ভর্তি করে চাল, ডাল, গম, ওষুধ নিয়ে আসছে! কয়েকটি জায়গায় সশরীরে হাজির হয়ে দেখতে চাইছে। এখন কি এ–সব করার সময়? প্রযুক্তিগত সাহায্য নিতে পারে। সশরীরে আসার কী দরকার? কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করছি।’
