বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। এই ঘটনাকে ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে তলব করা হয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং ডিজিকে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকেই অসাংবিধানিক বলে অ্যাখ্যা দিল তৃণমূল। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মুখ্যসচিব, ডিজিকে ডাকার কোনও সাংবিধানিক নিয়ম নেই। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। কেন তাঁদের ডাকা হল, তার জবাবদিহি করতে হবে কেন্দ্রকে।
জানা গিয়েছে, উস্তির শিরাকোল ও ফলতার দোস্তিপুরে নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনার ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উস্তি থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ৪ জনকে। ফলতা থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ৩ জনকে। ধৃতদের শুক্রবার দুপুরে ডায়মন্ডহারবার এসিজেএম আদালতে তোলা হয়। আর এবার ডায়মন্ড হারবারে জেপি নাড্ডা, কৈলাস বিজয়বর্গীয়র কনভয়ে হামলার রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে দিল পুলিশ।
এদিকে চলতি মাসেই পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সূত্রের খবর, ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর হতে পারে এই সফর। তার মধ্যেই আজ তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘নড্ডার জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তা ছিল। তিনি জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পান। বুলেটপ্রুফ গাড়িতে ছিলেন নাড্ডা। ওই সফরে পর্যাপ্ত সংখ্যক অ্যাডিশনাল এসপি, এসপি, পুলিশকর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়াররা ছিলেন। কিন্তু তিনি নিয়ম মেনে যাননি।’
অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে যে রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে তাতে উল্লেখ রয়েছে, নাড্ডার কনভয়ের জন্য জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি দেওয়া হয়েছিল। ছিল পাইলট কার। সিআরপিএফের এসকর্ট কার। পিএসও (সিআরপিএফ), চারজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, আটজন ইনস্পেক্টর, ৩০ জন অফিসার, ৪জন র্যাফ, ১৪৫ কনস্টেবল, ৩৫০ সিভিক পুলিশ (যাত্রাপথ ও গন্তব্য)। তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শিরাকোলে উত্তেজনা ছড়ানোর চক্রান্তের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে রাকেশ সিংয়ের নামে। ভাঙচুরের দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। দুটি মামলায় সাতজন গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, শিরাকোলে ওই ১০–১৫ মিনিটের উত্তেজনার পর ডায়মন্ডহারবারে আর কোথাও কিছু হয়নি। সুতরাং রাজ্য প্রশাসনকে দায়ী করা যাচ্ছে না।
বিজেপি’র প্ররোচনাতেই যে গতকালের ঘটনা, তা প্রমাণে কল্যাণ বলেন, ‘জেপি নাড্ডা সমাজবিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বিজেপি’র মিছিলে বাইক মিছিল ছিল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাকেশ সিং নামে এক অভিযুক্ত। যাঁর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। নাড্ডার কনভয় থেকে তিনি প্ররোচনা দিচ্ছিলেন।’ স্থানীয় সূত্রে খবর, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগে পুলিশ উত্তেজিত জনতার উপর লাঠিচার্জ করে কনভয় পার করে দেয়। তৃণমূলের কর্মী–সমর্থকদের বাধা উপেক্ষা করে নাড্ডার কনভয় ফের দুপুর ১টা নাগাদ সরিষাহাটেও একইরকম পরিস্থিতির মুখে পড়ে। প্রত্যেক জায়গাতেই তৃণমূলের বিক্ষোভ মিছিল থেকে কনভয়ের গাড়ি লক্ষ করে ইট ছোড়া হয় বলে বিজেপি’র অভিযোগ।
উল্লেখ্য, ঘটনার পরে রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে টুইট করে বলা হয়, ‘বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ডায়মন্ডহারবারে সভাস্থলে নিরাপদে পৌঁছেছেন। তাঁর কনভয়ে কিছু হয়নি। ফলতার দেবীপুরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু মানুষ বিক্ষিপ্তভাবে তাঁর কনভয়ের অনেক পেছনে থাকা গাড়িতে ইট ছোড়ে। প্রত্যেকে নিরাপদেই আছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। ঠিক কী হয়েছিল, জানতে তদন্ত চলছে।’ এই বিষয়ে বিজেপি নেতা মুকুল রায় প্রায় একই সময়ে সাংবাদিক বৈঠকে জানান, এটা ঠিক, নাড্ডাজির বুলেটপ্রুফ গাড়ি ছিল। কিন্তু ঘটনার সময় পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। কোনও পদক্ষেপ করেনি। আমার রাজনৈতিক জীবনে এমন ব্যর্থ সরকার আর দেখিনি।