ভারত পেট্রোলিয়ামের নতুন প্রকল্প উদ্বোধনে একদিনের ঝটিকা সফরে রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী। দিনের শুরুতে অসমে জনসভা করেন তিনি। তারপর সেখান থেকে হলদিয়ায় আসেন। ‘নমস্কার’ বলে হলদিয়ার জনসভায় বক্তব্য শুরু করলেন নরেন্দ্র মোদী। বাংলায় মনীষীদের প্রণাম জানালেন। এদিনের সভায় রয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ–সভাপতি মুকুল রায়, রাজ্যে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়–সহ অন্যান্য বিজেপি নেতৃত্ব। এরপরই আমার প্রিয় মা–বোনেরা নমস্কার বলে নিজের বক্তব্য শুরু করেন। সেখানেই তিনি বলেন, ‘তৃণমূল সরকার একটার পর একটা ‘ফাউল’ করে গিয়েছে। এবার বাংলার জনতা ‘রামকার্ড’ দেখাবে।’ হলদিয়ার জনসভা থেকে তৃণমূল সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন মোদী। বাংলার নির্বাচনে তৃণমূলই প্রধান প্রতিপক্ষ। তবে নেপথ্যে বাম, কংগ্রেস একজোট হয়ে ম্যাচ ফিক্সিং করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ তুললেন তিনি।
হলদিয়া হল বন্দর–শহর। সেখানে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেদিনীপুরের এই পবিত্র মাটিতে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এই মাটিতে মাতঙ্গিনী হাজরা, ক্ষুদিরাম বসুর রক্তের মাটি। এই মাটির বীরসন্তান বিদ্যাসাগরের বাঙালিকে বর্ণপরিচয় শিখিয়েছেন। ভারতকে দিশা দেখিয়েছেন এই মাটির বীরসন্তানরা। তাঁদের প্রণাম জানাই। এই মাটিতে আসা, প্রণাম করা নতুন প্রেরণা দেয়।’ এরপরই তিনি তোপ দাগেন, দশ বছরের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে ‘নির্মমতা’ মিলেছে। হলদিয়ার মঞ্চ থেকে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন নরেন্দ্র মোদী। আর বললেন, বাম আমলের অন্ধকার দিনগুলোই আবার ফিরেছে। প্রশাসন, পুলিশকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে।
রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে তিনি বলেন, ‘যথেষ্ট পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কেন বাংলা এত পিছিয়ে? কেন এই রাজ্যের যুবক–যুবতীদের কাজের সন্ধানে বাইরের রাজ্যে যেতে হচ্ছে? হলদিয়ার মঞ্চ থেকে সরকারকে বিঁধে প্রশ্ন তুললেন মোদী। রাজনীতির জন্যই এই পরিস্থিতি, এখানে উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর। বাংলায় বহু জেলায় এলপিজি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বাজেটে বাংলার জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ কেন্দ্রীয় প্যাকেজ আনা হয়েছে। চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলার মানুষ অধিকারের কথা বললে দিদি রেগে যান। বাম আমলে গণতন্ত্রের উপরে হামলা হয়েছে। ব্যবসা ধ্বংস করা হয়েছে। কৃষকদের যতটা সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল তা পাননি কৃষকরা। তাই বাংলার তরুণদের রোজগার নেই।’
তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেসের সময়ে দুর্নীতি হয়েছে। বাম আমলে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়েছিল ধ্বংসের রাজনীতি। স্বাধীনতার আগেও বাংলা অনেক এগিয়ে ছিল। স্বাধীনতার পর বাংলায় বিকাশের রাজনীতি হয়নি। তাই পিছিয়ে পড়েছে বাংলা। বাংলায় রেল প্রকল্পের জন্য আরও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। বাংলার মানুষের প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। শিল্প–বাণিজ্যে এক সময় অনেক এগিয়ে ছিল বাংলা। শিক্ষাক্ষেত্রেও দেশের অন্য রাজ্যের তুলনায় এগিয়ে ছিল। ২০১১ সালে সারা দেশের নজরে ছিল বাংলা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পরিবর্তন এল। মানুষ ভরসা করেছিল। কিন্তু ১০ বছর ধরে নির্মমতার শিকার হয়ে গেল বাংলা। বাংলা যা পেয়েছিল, তা পরিবর্তন নয়। বামেদের পুনর্জীবন। তাও সুদ সমেত। দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলার রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। বাংলায় পরিবর্তন হয়নি। বাম আমলের থেকেও খারাপ হয়েছে।
সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে প্রকল্প উদ্বোধন করতে এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে তুলোধনা করলেন প্রধানমন্ত্রী। আসলে খানিকটা নির্বাচনী প্রচার করে গেলেন। বাংলায় ৫০০০ কোটি টাকার পেট্রো প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তিনি। শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশের পাইপলাইন সংযোগের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। হবে প্রচুর কর্মসংস্থানও বলে মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর। কেন্দ্রীয় বাজেটে বাংলার জন্য বরাদ্দ প্রকল্পগুলির কথা ফের উল্লেখ করলেন। এরপরই বাংলার ক্ষমতায় এলে প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকেই ‘কিষাণ সম্মান নিধি’, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ চালু করবেন। তাতে বকেয়া টাকাও মিলবে কৃষকদের। হলদিয়ার মঞ্চ থেকে বড় ঘোষণা করলেন নরেন্দ্র মোদী।
এছাড়াও গ্যাসের তিনটি প্রকল্পের ফলে মানুষ উপকৃত হবেন। ডোবি–দুর্গাপুর গ্যাস পাইপলাইন তৈরি হয়ে গিয়েছে। এতে রাজ্যের বহু জেলায় পিএনজি–সিএনজি পৌঁছনোর ক্ষেত্রে বিপ্লব আসবে। এতে দুর্গাপুর ফার্টিলাইজার কারখানাও পর্যাপ্ত গ্যাস পাবে। রানীচকে আধুনিক ফ্লাইওভার, হলদিয়া ডক কমপ্লেক্স পড়শি দেশের সঙ্গে বণিজ্যের সুযোগ আরও বাড়বে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।