বিহার নির্বাচনের আগে জেলে থাকা লালুপ্রসাদ যাদব বিহারবাসীর উদ্দেশ্যে কবিতা লিখেছিলেন। সেটা হল— ‘ওঠো বিহারী করো তৌয়ারি’। কিছু বিহারী তৈয়ারি করেছিল। কিন্তু সবাই না। তাই লালপ–পুত্র তেজস্বী জিতলেও মহাজোটকে পেছনে ফেলে দিয়ে বিহারের কুর্সি দখল করল এনডিএ জোটই। সুতরাং আবার নীতীশ কুমারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রশস্ত হল।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পর অন্যান্য রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা কমলেও, বিহারে এখনও অটুট মোদী ম্যাজিক। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল আরও একবার তা প্রমাণ করে দিল। বিহারে নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা যে ছিল সেটা ভোটের আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় ভিড় আগের তুলনায় কম হচ্ছিল। নীতীশের সভায় পেঁয়াজ ছোঁড়া, লালুপ্রসাদ জিন্দাবাদের মতো স্লোগান দিতেও শোনা গিয়েছে জনতাকে। কিন্তু ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, এসব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা।
তাই এতকিছুর পর আত্মনির্ভর ভারতের পক্ষে জনাদেশ দিয়েছে বিহার। এনডিএ’র ফের ক্ষমতায় ফেরা স্পষ্ট হতেই টুইট করে বিহারবাসীকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দাবি, এটা গরিব, পীড়িত ও মহিলাদের জনাদেশ। গণনার গোড়ার দিকে মনে হয়েছিল পরিবর্তনের পথেই রায় দিতে চলেছে বিহার। কিন্তু পরবর্তীতে পরিস্থিতি বদলে যায়। নীতীশ কুমার বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলেও গতবারের থেকে বেশি আসনে জয় নিশ্চিত করে বিজেপি।। তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়ে উঠেছে আরজেডি। বুথফেরত সমীক্ষার রিপোর্টকে আরও একবার ভুল প্রমাণ করে বিহারে ফের সরকার গড়তে চলেছে এনডিএ। জেডি(ইউ)–এর থেকে তারা যদি বেশি আসনও পায়, নীতীশ কুমার যে মুখ্যমন্ত্রী, তা আগেই ঘোষণা করেছিল বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কার্যক্ষেত্রে হয়েওছে তাই। এনডিএ জোটে বিজেপি একাই ৭৪টি আসন পেয়েছে। ফলে, বিজেপি’র প্রতিশ্রুতি মতো ধরে নেওয়া যায় নীতীশ কুমারই ফের বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। ১৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে গণনা শেষে বিহারে সরকার গড়ার দৌড়ে মহাজোটকে পেছনে ফেলে দেয় বিহারে ক্ষমতাসীন এনডিএ।
এবারে বিহারে পুরুষদের থেকে ৫ শতাংশ বেশি মহিলা ভোট দিয়েছিলেন। আর উজ্বলা যোজনা, মহিলাদের জনধন অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া, এবং তিন তালাক আইন মহিলাদের মধ্যে নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে নীতীশও মদ বন্ধের পর থেকে মহিলাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।যা তাঁর পক্ষে গিয়েছে। তবে, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার এই নির্বাচনে তাঁকে বাঁচিয়ে দিল নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা। এটাই প্রমাণ হল।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এনডিএ ম্যাজিক ফিগার ১২২ অতিক্রম করে আরও তিনটি আসন বেশি পেয়েছে। অর্থাত্ ২৪৩টি আসনের মধ্যে এনডিএ জিতেছে ১২৫টি আসনে। তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন মহাজোট হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে থেমেছে ১১০ আসনে। অন্যরা পেয়েছে বাকি ৮টি আসন। টুইটারে নরেন্দ্র মোদী লিখেছেন, বিহার দুনিয়া গণতন্ত্রের প্রথম পাঠ দিয়েছিল। আজ ফের বিহার বোঝাল কীভাবে গণতন্ত্রকে মজবুত করা যায়। রেকর্ড সংখ্যায় ভোট দিয়েছেন বিহারের মহিলা, বঞ্চিত ও গরিব মানুষ। উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাসের মন্ত্রে ভরসা করেছেন তাঁরা। সকলের জন্য উন্নয়নের আশ্বাস দিচ্ছি। বিহারের জনতা–জনার্দনের আশীর্বাদ আরও একবার পেয়েছি। বিহারের জনতাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
‘চক্রান্ত করে ধীরগতিতে ভোটগণনা’, ‘জয়ের পরেও শংসাপত্র না দেওয়া’ ইত্যাদি অভিযোগের মধ্যেই চূড়ান্ত ফলাফল পেতে পেতে পার হয়ে যায় ভোর ৩টে। এনডিএ: ১২৫ (বিজেপি: ৭৪, জেডিইউ: ৪৩, এইচএএম: ৪, ভিআইপি: ৪), মহাজোট:১১০ (আরজেডি: ৭৫, কংগ্রেস:১৯, সিপিআই: ২, সিপিএম:২, সিপিআই (এমএল):১২), অন্যান্য: ৭ (এআইএমআইএম: ৫, বিএসপি:১, নির্দল: ১)।