মঙ্গলবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১০টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি রাজ্যে নমুনা পরীক্ষা আরও বাড়ানোর দরকার। কারণ, ওই রাজ্যগুলিতে পরীক্ষার সংখ্যা কম।’ এখানেও কেন্দ্রের অভিযোগের তির ছিল বাংলার দিকে। আর বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হল। যা দেখল গোটা দেশ। দেশের ১০ রাজ্য করোনাকে পরাস্ত করতে পারলে করোনামুক্ত হবে দেশ। করোনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে তাঁর বক্তব্যে যে বিষয়টিতে তিনি জোর দিয়েছেন সেটি হল বাংলা–সহ দেশের পাঁচ রাজ্যকে করোনা টেস্টের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।
এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে আমরা দেখেছি উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং দিল্লির কয়েকটি জায়গায় মারাত্মক সমস্যা ছিল। তবে অমিত শাহের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর সেই সমস্যার উপশম পাওয়া যায়। আমরা সেই ফলই পেয়েছি, যেটা চাইছিলাম।’ এটা বাংলাকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে বুঝতে পেরে তেড়েফুঁড়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রক্ষিতে বাংলায় করোনা চিকিৎসায় রাজ্যের উদ্যোগের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেন, গোটা দেশেই করোনা সংক্রমণ উদ্বেগের বিষয়। তবে এই নিয়ে প্যানিকড হওয়ার কিছু নেই। রাজ্যে সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় তৈরি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা হচ্ছে বিনামূল্যে। চিকিত্সার খরচের জন্য গরিব মানুষদের ৭.৫ লাখ মানুষকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হয়েছে। ওই কার্ড থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত এবং তেলঙ্গানায় নমুনা পরীক্ষা আরও বাড়াতে হবে। করোনায় মৃত্যুহার এক শতাংশের নীচে যেভাবে হোক নামিয়ে নিয়ে আনতে হবে। কনটেইনমেন্ট, কনট্যাক্ট ট্রেসিং এবং কোয়রেন্টিনে আরও জোর দিতে হবে।’ জবাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও রাজ্যের ১০০ শতাংশ মানুষকে রেশন দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকার করোনা রোগীদের জন্য ১০০ সেফ হোম তৈরি করেছে। এখানে ৭০০০ বেড রয়েছে। যারা বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে পারবেন না তারা এইসব সেফ হোমে থাকবেন। ২৪ ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সার্ভিস চালু রেখেছেন ৯৬ চিকিৎসক।
এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান, করোনা পজিটিভ রোগীদের জন্য টেলি সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং চালু করা হয়েছে। একসময় আমরা ডেথ অডিট শুরু করেছিলাম। এখন দেখা যাচ্ছে করোনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে কো–মরবিডিটিও একটি বড় বিষয়। রাজ্যের ৮৯ শতাংশ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে কো–মরবিটিতে। মাইল্ড এবং উপসর্গহীন রোগীদেরও খুঁটিয়ে নজর রাখা হচ্ছে। রাজ্যের আশাকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ২.৫ কোটি ঘরে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করছেন। সিরিয়াস রেসপিরেটরি ইলনেস আছে এমন ২.৫ লাখ মানুষকে সনাক্ত করে তাদের চিকিত্সা শুরু করা হয়েছে। রাজ্যে সেল্ফ হেলফ গ্রুপের ১ কোটি সদস্যকে করোনা সচেতনতায় কাজে লাগানো হয়েছে।
