লিড নিউজ

কাদের ফোনে আড়ি পাতল পেগাসাস?‌ তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি

১৮ মাসের ব্যবধানে ফের শিরোনামে ‘পেগাসাস’। ইজরায়েলি সংস্থার তৈরি এই বিশেষ প্রযুক্তি বা স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে দেশের তিনশোর বেশি ভেরিফায়েড নম্বরে আড়ি পাতা হয়েছে বলে দাবি করল ‘দ্য ওয়্যার’ সহ পশ্চিমী দেশের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। নজরদারির তালিকায় রয়েছেন দেশের বহু মন্ত্রী, বিরোধী নেতা, সাংবাদিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, সরকারি আমলা, বিজ্ঞানী ও সমাজকর্মী। পেগাসাসের মাধ্যমে আড়ি পেতেছিল এক অজ্ঞাত সংস্থা।

 

ফরেন্সিক পরীক্ষায় ফোনে আড়ি পাতার বিষয়টি প্রমাণিত বলে দাবি করা হয়েছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরও বাদ যাননি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি ল্যাবের ডিজিটাল ফরেন্সিক রিপোর্টে এমনটাই রয়েছে বলে দাবি একটি সর্বভারতীয় সাংবাদ মাধ্যমের।

সমাজের কিছু বাছাই করা ব্যক্তির উপর চরবৃত্তি প্রকাশ্যে আসতেই উত্তাল গোটা দেশ। এরপরেই মোদী সরকার নাগরিকের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে বলে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তাহলে কি সরকারের বিরুদ্ধে মত পোষণ করা সাংবাদিক, সমাজকর্মী, আমলা-মন্ত্রীদের বেছে বেছে টার্গেট করা হয়? বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, এই ঘটনা এলগার পরিষদের উপর সরকারের নজরদারিকেও ছাপিয়ে গিয়েছে।

 

বৈধ সরকারই পেগাসাস ক্রয় করতে পারে বলে দাবি করেছে এনএসও। ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস টার্গেট করেছে রাহুল গান্ধী ও নতুন তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকেও। সংবাদ সংস্থার দাবি, ৩০০টি মোবাইলে আড়িপাতা হয়েছিল। এর মধ্যে দু’টি রাহুল গান্ধীর নম্বর।

এই বিষয়ে অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‌কেন্দ্রের স্বরূপ আমাদের সামনে তুলে ধরছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। যে সফটওয়ার দিয়ে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ফোনে আড়িপাতা যায় সেই পেগাসাস ব্যবহার করে কেন্দ্র। এমনটাই বলছে সরকারের নথি। সরকার বলছে এনএসও-র তৈরি সফটওয়ার সরকার ক্রাইম, জঙ্গি কার্যকলাপ রোধের জন্য ব্যবহার করে।’‌ পাল্টা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ খুব চাঁচাছোলা ভাষায় বলেন, ‘‌বিরোধীরা ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে যা বলছে তার কোনও ভিত্তি নেই।

 

কারণ যে ওয়েব পোর্টাল ওই খবরটি ফাঁস করেছে তারা স্পষ্ট লিখেছে, চর সফটওয়্যার পেগাসাস–এর ডেটা বেসে কারও ফোন নম্বর থাকার অর্থ এই নয় যে তার ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে। বিরোধীরা বলছে, ভারত নজরদারির জন্য পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে। কিন্তু খবর নিয়ে দেখুন, দুনিয়ার ৪৫ দেশ ওই সফটওয়্যার ব্যবহার করে। তাহলে শুধুমাত্র ভারতের দিকেই আঙুল তোলা হচ্ছে কেন?‌’‌

বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ট্যুইটারে দাবি করেন, নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী, আরএসএস নেতা, এমনকী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ফোনে আড়ি পাততেও পেগাসাস-কে ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু পশ্চিমী দেশের সংবাদমাধ্যম শীঘ্রই রিপোর্ট প্রকাশ করবে বলেও তিনি জানান। আড়ি পাতার তালিকায় নাম রয়েছে ৪০ জনেরও বেশি নামজাদা সাংবাদিকদের। তিনজন বিরোধী নেতা। মোদী মন্ত্রিসভার দুই মন্ত্রী। দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বর্তমান ও প্রাক্তন প্রধান এবং বহু ব্যবসায়ী। ফাঁস হওয়া তথ্যভাণ্ডারটি প্যারিসের একটি সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিশ্লেষণ করেছে। তারাই ওয়াশিংটন পোস্ট এবং দ্য গার্ডিয়ান–সহ বিশ্বের একাধিক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সেই তথ্য শেয়ার করে।